
মোঃ মেহেদী হাসান আমার সকাল ২৪
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় চলছে পেঁয়াজ রোপণের মৌসুম। শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক–কৃষাণীরা। উপজেলার মোট আবাদি জমির প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ জমিতেই পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে হালি পেঁয়াজ রোপণ এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রায় ৪০ হাজার পেঁয়াজ চাষি পরিবার। তবে কৃত্রিম সার সংকট, সারের মূল্যবৃদ্ধি, বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সালথা উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর। গত মৌসুমে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বছর লালতীর কিং, তাহেরপুরী, ফরিদপুরী, বারি-১, সুলতান, লালতীর হাইব্রিড, সম্রাট, ক্রস এস-৮০, রঙ্গিলা-৭সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ রোপণ করা হচ্ছে। দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হাইব্রিড পেঁয়াজ বীজের চাহিদাও বেড়েছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার প্রায় ৮০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে পেঁয়াজ বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।
পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তারা মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা, বীজ ও সারের দাম কমানো এবং পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে কৃষিঋণ প্রদানের দাবি জানান।
চাষিরা আরও বলেন, মৌসুমের শেষ দিকে পেঁয়াজ মজুতদারদের হাতে চলে যাওয়ায় দাম বাড়লেও কৃষকরা এর সুফল পান না। পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার না থাকায় অনেক সময় পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। পরিবহনের সময় হালি পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলনেও প্রভাব পড়ে। ফরিয়া ও ব্যাপারীদের হয়রানিতেও চাষিরা ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন সিকদার বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার কৃষি প্রণোদনার আওতায় চলতি মৌসুমে ৮০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রণোদনা বাড়ানো এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।