ডুয়েটের (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) আর্কিটেকচার বিভাগের প্রভাষক নিশাদ জাহান ইতু মিয়াজির আপত্তিকর ও অশ্লীল টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা তার নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে ইতু মিয়াজির নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, টিকটক ভিডিও নিয়ে তাদের আপত্তি নেই, তবে তারা এমন শিক্ষক চান না, যার রুচিবোধ ও আচরণ সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা মনে করেন, একজন শিক্ষক শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞানই প্রদান করেন না, তার সামগ্রিক আচরণও শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলে। কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরির অভিযোগে তারা ইতু মিয়াজিকে শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতু মিয়াজির একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে। একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, “জন্ম থেকে যখন আমি প্রথম চোখ খুলি তখন আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে টিকটকার হবো।” আরেকটি ভিডিওতে তিনি বলেন, “যারা ছাগল, গরু চোর, তারা টিকটক করে।” এছাড়া বিভিন্ন ভিডিওতে কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি ও আপত্তিকর কথাবার্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ইতু মিয়াজি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে আর্কিটেকচার বিভাগে পাস করেছেন। তার ভিডিওগুলোর মধ্যে একটি ভিডিওতে তিনি বলছেন, “আমি জানি তোমরা অনেকেই চাও না আমি টিকটক করি…সেজন্যই আমি ইউটিউবে নতুন একটি ভিডিও আপলোড করেছি। সেখানে যদি সাড়া পাই তাহলে আর তোমাদের আমার টিকটক ভিডিও দেখতে হবে না।” এছাড়াও আরও কিছু ভিডিওতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও আপত্তিকর কথাবার্তার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা কেউ কি টিকটক দেখেন? বিষয়টি সামনে এসেছে, তাই আমরা এটি খতিয়ে দেখছি। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
আর্কিটেকচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বায়েজিদ ইসমাইল চৌধুরী বলেন, “সব প্রক্রিয়া মেনেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে, ইতু মিয়াজি টিকটকে আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচার করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে।” ইতোমধ্যে তাকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বিরত রেখে এক সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
আপনি কি ইতু মিয়াজির ভিডিওগুলো দেখেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. বায়েজিদ ইসমাইল চৌধুরী বলেন, “তার ইউটিউব কনটেন্টগুলো দেখেছি, সেখানে আপত্তিকর কিছু নেই। তবে আমি কখনও টিকটক দেখিনি। টিকটকে কী আছে তা বলতে পারব না। তবে টিকটক ভিডিও বানানো মানুষের মৌলিক অধিকার। এর কনটেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”
ইতু মিয়াজির মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, টিকটক ভিডিও তৈরি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই, আপত্তি কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা, যেখানে নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি করা ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া বেমানান।
ইতু মিয়াজিকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন, তবে সমালোচনাকারীর সংখ্যাই বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জার্মান প্রবাসী কাজী আলীম উদ্দীন তার ফেসবুকে লিখেছেন, “দুর্জন বিদ্বান হলেও তা পরিত্যাজ্য”, ঠিক তেমনই “সোশ্যাল মিডিয়ার সাইকোরা বিদ্বান হলেও তা পরিত্যাজ্য।” আশা করি সামাজিক অবক্ষয় প্রশমনে ডুয়েট প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নেবে।
বশিরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “হয়তো ক্লাসে কোনোদিন এমনও কথা শুনতে হতে পারে…!!! আজকের সকালে নতুন একটা ভিডিও শেয়ার করেছি, আমার প্রিয় ছাত্ররা, তোমরা কি সেটা দেখেছ? তখন ছাত্ররা বলবে- ম্যাডাম সকালে সিটি (ক্লাস টেস্ট) ছিল তাই দেখতে পারিনি। এখন দেখি ম্যাডাম…।”