
মোঃ সোলায়মান গনিমোঃ সোলায়মান গনি, উলিপুর উপজেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত বালু ফসলি জমিতে মজুদ করে পাহাড়সম স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। পরে সেই বালু স্থানীয় সড়ক ব্যবহার করে ট্রাক্টর ও ট্রাকযোগে বিক্রি করা হচ্ছে।
এতে ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ কাঁচা সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ট্রাক্টরের ভারী যাতায়াত ও বিকট শব্দে স্থানীয়দের রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শব্দদূষণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, হাতিয়ায় সরকারি কোনো বালুমহাল না থাকলেও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বহু বছর ধরে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বালু উত্তোলন চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি পুরোনো চক্রের সঙ্গে নতুন কিছু ব্যবসায়ী যুক্ত হয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। এতে স্থানীয়রা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন,
“রাতে ট্রাক্টরের শব্দে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, জমি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।”
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. মেহেদী হাসান বলেন,
“অভিযানের সময় বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। খালি গাড়িসহ ড্রাইভার ও হেলপারদের আটক করা হয়েছিল, তবে অপরাধ প্রমাণ না পাওয়ায় সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন,
“প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগ সত্য নয়। আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। এসিল্যান্ড ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেন, যা তার এখতিয়ারভুক্ত বিষয়।”
এদিকে স্থানীয় জনসাধারণ দ্রুত প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।