
মস্তু মিয়া | বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়–এর শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়েছে ব্যাপক আনন্দ, উৎসাহ ও হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে মিলনমেলায় ভরা উৎসবস্থল।
শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রায় তিন সহস্রাধিক প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের পরিবার-পরিজনের অংশগ্রহণে সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পুনর্মিলনে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখ মো. আইয়ুবুর রহমান–এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান, প্রাক্তন ছাত্র এসএম শাহাজাদা খাদেম এবং বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম।
সকাল ১১টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে শতবর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এ সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম সিদ্দিকী। পরে প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জেলা প্রশাসককে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন,
“একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তি নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়। এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং দেশ ও জনগণের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
তিনি আরও বলেন, তাঁর বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন—এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে শিক্ষকদের সম্মান সবার ঊর্ধ্বে। শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি শতবর্ষ আয়োজনের জন্য আয়োজক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রাক্তন ছাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামস এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমূল হাসান রাফি।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ পর্ব। এতে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের স্কুলজীবনের নানা স্মৃতি তুলে ধরে আবেগঘন বক্তব্য দেন। অনেকেই বিদেশ থেকে বিশেষভাবে দেশে ফিরে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরা, পুরোনো দিনের গল্প আর দলবদ্ধ ছবি তোলায় মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় ও আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায় গান ও নৃত্যে জমে ওঠে পুরো আয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘ এক শতাব্দী ধরে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।