
মোঃ রফিকুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম
আমার সকাল ২৪ নিউজ
গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়, বাগান, বন-বাদারে এক সময় দেখা মিলত ছোট কিন্তু নিপুণ কারিগর পাখি টুনটুনির। গাছের পাতা একসঙ্গে সেলাই করে বাসা তৈরির অসাধারণ দক্ষতার জন্য এদের সবাই দর্জি পাখি নামেও চেনে। কিন্তু এখন আর আগের মতো তেমন দেখা মেলে না এই উপকারি পাখিটির।
টুনটুনি মূলত চড়ুই জাতের পাখি। এদের দেখা যায় খোলা খামার জমি, ঝোপঝাড় ও বনাঞ্চলে। ফুলের মধু খেয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি নানা ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ ও কৃষিজ ফসল রক্ষায়ও সহায়তা করে।
অঞ্চলভেদে টুনটুনিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়—টুনি, মধুচুষকি, দুগাটুনটুনি, বেগুন টুনটুনি, মৌটুসি, নীলটুনটুনি, দর্জি, মৌটুসকি ইত্যাদি।
বাবুই পাখিকে প্রকৃতির স্থপতি বলা হলেও নির্মাণশৈলীর ক্ষেত্রে টুনটুনির অবস্থান আলাদা। আকারে ছোট হলেও অত্যন্ত নিপুণভাবে টুনটুনি ঠোঁট দিয়ে গাছের পাতা সেলাই করে শক্ত ও আকর্ষণীয় বাসা তৈরি করে। এরা প্রধানত ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ বা মাঝারি আকারের গাছ যেমন—খোকশা, লেবু, ডুমুর, কাঠবাদাম, সূর্যমুখী ইত্যাদিতে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। এর মধ্যে খোকশা গাছে তাদের বাসার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
স্ত্রী ও পুরুষ—উভয় টুনটুনি ১–২টি পাতা সেলাই করে একটি বাসা তৈরি করতে ৪–৫ দিন সময় নেয়। তুলা, সুতা, শুকনো পাতা, লতার অংশ, এমনকি গরু–মহিষের লেজের চুলও ব্যবহৃত হয় বাসায়।
প্রজনন মৌসুম
মাঘ মাসের শেষ দিকে শুরু হয় টুনটুনির বাসা বানানো। ফাল্গুন–আশ্বিনের মধ্যে ৪–৫টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই ১০ দিন ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। এরপর বাচ্চাসহ বাসা পরিবর্তন করে। বছরে ২–৩ বার ডিম দেয় এরা।
মানুষ বা অন্য প্রাণী বাসার কাছে গেলে এরা ডানা ঝাপটিয়ে টুনটুন শব্দ করে বাসা রক্ষায় তৎপর হয়। তবে ঝড়–বৃষ্টিতে পাতাসহ বাসা পড়ে গিয়ে ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই।
গ্রামের শিশুদের কাছে টুনটুনির বাসা এক ধরনের আকর্ষণের বিষয়। কিন্তু অনেক সময় কৌতূহল থেকেই বাসা বা ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
আজকাল আর আগের মতো দৃষ্টিনন্দন টুনটুনির বাসা চোখে পড়ে না। বন উজাড়, সবুজ কমে যাওয়া এবং মানুষের অসচেতন আচরণের কারণে এই উপকারি ছোট পাখিটি এখন বিলুপ্তির কাতারে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সবুজ গাছপালা বৃদ্ধি ও পাখি সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি।