ইসলামে তাহাজ্জুদ নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতেন এবং তাঁর সাহাবীদেরও তা করার জন্য উৎসাহিত করতেন।
এই তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের শেষাংশে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নফল নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمِنَ الَّیْلِ فَتَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ یَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ یُنْفِقُونَ
অর্থ: তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক রাত জেগে থাকে, তারা তাদের পালনকর্তার উদ্দেশে ভয় ও আশায় ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। (সূরা আস-সাজদাহ: ১৬)
জেনে রাখা ভালো তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসেও অনেক বর্ণনা রয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل
অর্থ: ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। (মুসলিম)
এই নামাজ হলো নফল নামাজ। তাই এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই। তবে সাধারণত ২ রাকাত করে ৪ রাকাত, ৮ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৬ রাকাত, বা ২৪ রাকাত পড়া হয়। প্রতি ২ রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে দাঁড়ানো হয়। তাহাজ্জুদ নামাজে সুরা ফাতেহার পর যে কোনো সুরা পড়া যায়।
নিয়তের আরবি রূপ:
বাংলা উচ্চারণ:
নোয়াইতু আন আউসাল্লিয়া তাতাওয়্বু’আত ত্বাহাজ্জুদি রাকআতাইন লিল্লাহি তা’আলা।
অর্থ:
আমি আল্লাহ তা’আলার জন্য দুই রাকাত নফল তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
**১. **নিয়ত করা। **২. **কায়াম করা।**৩. **সুরা ফাতেহা পড়া।**৪. **কোনো সুরা পড়া।**৫. **রুকু করা।**৬. **রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো।**৭. **সিজদা করা।**৮. **সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানো।**৯. **সিজদা করা।**১০. **সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানো।**১১. **দ্বিতীয় রাকাতের জন্য নিয়ত করা।**১২. **সুরা ফাতেহা পড়া।**১৩. **কোনো সুরা পড়া।**১৪. **রুকু করা।**১৫. **রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো।**১৬. **সিজদা করা।**১৭. **সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানো।**১৮. **সিজদা করা।**১৯. **সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানো।**২০. **সালাম ফিরানো।
উত্তরঃ নফল।
নফল মানে হলো অতিরিক্ত ইবাদত। নফল ইবাদত করা ওয়াজিব নয়, বরং সওয়াব লাভের জন্য করা হয়। তবে, তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে হাদিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন এবং তাঁর সাহাবীদেরও তা করার জন্য উৎসাহিত করতেন। হাদিসে তিনি বলেছেন, “তাহাজ্জুদ নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি।” (তিরমিযি)
তাই, তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করা যদিও ওয়াজিব নয়, তবুও এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ নফল ইবাদত।
ইসলামে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের অশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ৪০ দিন ধরে নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, তার দরজা থেকে শয়তান তাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।” (তিরমিযি)
৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের কিছু ফজিলত:
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে এবং শেষ হয় ফজরের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত।
তবে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ অংশ, যখন বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।” (তিরমিযি)
পুরুষদের মতো মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কোন বিশেষ নিয়ম নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজের সাধারণ নিয়ম পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
তবে, মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত:
• পোশাক: শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না এবং এমন পোশাক পরা উচিত যা সতর ঢেকে রাখে।
• সুগন্ধি: আমরা অনেকেই হই তো বা জানি নাহ মহিলাদের নামাজে বা বাইরে সেন্ট বা আতর ব্যবহার না করাই ভালো।
• আওয়াজ: অন্যদের ঘুম ভেঙে যায় এমনভাবে জোরে জোরে তিলাওয়াত করা উচিত নয়।
• গোপনী*য়তা: আমাদের এই নামাজ আদায়ের সময় একান্তে আদায় করা উচিত কারণ এই নামাজ গোপনীয় ইবাদত তাই।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়
আল্লাহর নৈকট্য লাভ: তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করে। কারণ, রাতের শেষভাগে যখন সকলে ঘুমিয়ে থাকে, তখন একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানোর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসা ও অনুগ্রহ লাভ করে।
পাপের মাফ: তাহাজ্জুদ নামাজ পাপের মাফের অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং দিনে ফরজ নামাজ আদায় করে, তার মাঝে ও জিনার মাঝে পাহাড়ের সমান পার্থক্য সৃষ্টি হয়।” (তিরমিযি)
জান্নাতের চাবিকাঠি: তাহাজ্জুদ নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তাহাজ্জুদ নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি, জান্নাতের দরজা খোলার জন্য এটিই সবচেয়ে সহজ উপায়।” (ইবনে মাজাহ)
শয়তানের প্রতিরোধ: তাহাজ্জুদ নামাজ শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। রাতের শেষভাগে শয়তানের প্ররোচনা বেশি থাকে। তখন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূরীকরণ: তাহাজ্জুদ নামাজ মনের দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূর করে। রাতের শেষভাগে যখন একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানো হয়, তখন মন থেকে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূর হয়ে যায় এবং মনে প্রশান্তি আসে।
রিযিক বৃদ্ধি: তাহাজ্জুদ নামাজ রিযিক বৃদ্ধির মাধ্যম। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যারা রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তাদের রিযিকে বৃদ্ধি করে দেন।” (ইবনে মাজাহ)
অসুস্থতা থেকে মুক্তি: তাহাজ্জুদ নামাজ অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যারা রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তাদের অসুস্থতা দূর করে দেন।” (ইবনে মাজাহ)
আমার সকাল ২৪ পত্রিকার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন