
বান্দরবান প্রতিনিধি: সুকেল তঞ্চঙ্গ্যা
বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান নীলাচল। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এই এলাকায় ভিড় জমালেও সেখানে যাতায়াতের প্রধান সড়কের বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে পর্যটক ও স্থানীয়দের। অথচ সড়কটির জরাজীর্ণ অংশ সংস্কার না করে প্রায় ৮ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জনবসতিহীন এলাকায়—যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
এলজিইডি বান্দরবান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘যৌথ খামার থেকে টাইগার পাড়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকল্পের জন্য ৪ ডিসেম্বর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ৩.২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ২৩৭ টাকা।
এই কাজ পেয়েছেন ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন কোম্পানির মালিকানাধীন ‘হিমু কনস্ট্রাকশন’।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরও কীভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের একজন ওয়ার্ড সভাপতির প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজ পেল?
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, টেন্ডারে নীলাচল–টাইগার পাড়া সড়ক উন্নয়নের কথা উল্লেখ থাকলেও কাজ হচ্ছে টাইগার পাড়া থেকে রুপালি ঝর্ণা ও সিনিয়র পাড়া পর্যন্ত নির্জন এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদারের ভাষায়—
“চুক্তিপত্রে যে সড়কের কথা বলা হয়েছে, কাজ হচ্ছে তার বাইরে। এটি টেন্ডার শর্ত ভঙ্গ ছাড়া কিছুই নয়।”
স্থানীয়রা জানান, যে নতুন সড়কে কাজ চলছে, সেখানে নেই কোনো গ্রাম, স্কুল বা অফিস। তাই সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। বরং উপকৃত হবেন কাছাকাছি থাকা রিসোর্ট ও বাগান মালিকরা।
তাদের অভিযোগ—সরকারি অর্থে প্রভাবশালীদের রিসোর্ট ও ব্যক্তিগত স্থাপনায় পৌঁছানোর রাস্তা বানানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩ কিলোমিটারের ওই এলাকায় সড়ক নির্মাণের জন্য পাহাড় কেটে জমি ভরাট করা হচ্ছে। সাইট ওয়ালের পাশ থেকেও মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে—যা পাহাড়ধসসহ পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন—
“পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। গত দেড় বছরে এ ধরনের কোনো অনুমতির আবেদন আসেনি। অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা আইনত অপরাধ।”
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন—
“পার্বত্য এলাকায় আগে রাস্তা হয়, পরে জনবসতি গড়ে ওঠে। নতুন সড়কটি রেইচা মেইন সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিকল্প পথ হিসেবে কাজ করবে। সড়কের পাশে কারো রিসোর্ট আছে কিনা, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।”
তিনি আরও জানান, সড়কটি ২০১৩ সালে এলজিইডির গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, তবে নামকরণে ভুল হয়েছিল।
স্থানীয়দের দাবি, নতুন সড়কটি রেইচা আর্মি ক্যাম্পের মাত্র ৫০ মিটার সামনে গিয়ে যুক্ত হবে। ফলে চেকপোস্ট এড়িয়ে মাদক, সিগারেট ও অন্যান্য অবৈধ পণ্য পাচারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
প্রথমে নীলাচল-টাইগার পাড়া প্রধান সড়কের জরুরি সংস্কার,
তারপর প্রকৃত জনস্বার্থ বিবেচনা করে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন।