সাইফুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :
নওগাঁয় শতবর্ষী বৃদ্ধ তাফের আলীর মানবেতর জীবন-যাপন।
প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে তার ৪ সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ৭ সন্তান। মোট ১১ সন্তানের বাবা শতবর্ষী তাফের আলী। তিনি তার যৌবনকালে সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেছেন এমনকি করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও। এখন বৃদ্ধ বয়সে সে নিজেই দূর্বীসহ জীবনযাপন করলেও আজ তার পাশে নেই সন্তানরা। নেই খাবারের কিংবা বৃদ্ধ বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়া অসুস্থতা জণীত চিকিৎসার নিশ্চয়তা। বর্তমানে ছোট ছেলে আয়নাল হোসেনের পরিবারের সাথে তিনি বসবাস করলেও পরিবারের কেউই আর রাখেন না শতবর্ষী এই বাবার খবর। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তফের আলী। যদিওবা তার জাতীয় পরিচয় পত্র মতে তার বয়স ৯৫ বছর। কিন্তু তিনি দাবি করেন, তার বয়স ১০৮ থেকে ১১০ বছরের মধ্যে হবে। ইতি মধ্যেই ১১ সন্তানের জনক বৃদ্ধ বাবা বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট সন্তানের কাছে ভরণ-পোষণ চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও মারধর এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়াও সন্তান বাবার সম্পত্তি ভোগ দখল ও ঘর থেকে টাকা চুরি করে। পরে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ বাবা এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আদালতের দ্বারস্ত হোন। এরপর বিজ্ঞ আদালত তাফের আলীর কষ্টের কথা শুনে সন্তান আইনালের বিরুদ্ধে গত ২০ আগস্ট আদলতে মামলা হয় এবং একই তারিখে সমন জারি করে গত ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করে। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বয়স জণীত রোগ-শোকে কাতর ৯৫ বছর বয়সী তাফের আলী একা জরাজীর্ণ একটি ভাঙা বাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। বলতে গেলে অনেকটাই তাফের আলী মানবেতের জীবন-যাপন করছেন। বসত ঘরের বর্তমান অবস্থা দেখে এটিকে ঘর না বলে বলা চলে মৃত্যুর ফাঁদ। মরিচায় ঝরঝরে হয়ে গেছে গোটা ঘরের চালের টিন। টিনে তৈরি হয়েছে হাজারো ফুটো। আর তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঘরের বিছানা পত্র সহ সবকিছু। দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে ঘরের কাঠামোর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে কোনো সময় ঘরটি ভেঙে পড়তে পারে। তাফের আলী জানান, সন্তানরা তাকে দ্যাখেন না। নিজেরা ভালো বাড়িতে থাকেন আর তাকে রেখেছেন ভাঙা জরাজীর্ণ বাড়িতে। ভাতও খেতে দেয় না। অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে চেয়ে ভাত খান। এ ছাড়া ওষুধের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় তাকে। ছেলে আয়নাল ও তার স্ত্রী তাকে খাবার পর্যন্ত দেয় না। এসব সহ্য করতে না পেরে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার সেই সন্তানের চাপেই আপস করতে আদালতে গিয়েছেন তিনি। তারপরও সেই সন্তানরা তাকে খেতে পর্যন্ত ডাকেননি। ছেলে আয়নালের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, অনেক সময় বাজার করে বাসায় নিয়ে গেলে রান্না করতে দেরি হয়। তখন রাগ করে খবার খেতে চায় না। এ ছাড়াও সকালের খবার খেতে বললে বলে, বাজার থেকে খেয়ে আসছি। এসব প্রায়ই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে থাকে এবং এর আগে জেলও খেটেছি। তবে আমাদের ভুল হয়েছে সঠিক সময়ে খবার দেওয়া ও যত্ন নেওয়া উচিত ছিলো। আমারও তো দুটো ছেলে মেয়ে রয়েছে। তবে যেটুকু সামর্থ্য রয়েছে চেষ্টা করি বাবাকে ভরণপোষণ দেওয়ার জন্য। এলাকার স্থানীয় প্রতিবেশী জনাব খোকা বলেন, তাফের আলীর ৯ জন ছেলে এদের মধ্যে ৮ জন বাইরে থাকেন বাকি একজন ছেলে আয়নাল তিনি তার বাবার সঙ্গে আলাদা থাকেন। অনেক সময় ছেলে তার বাবাকে খাবার দেয় কখনো দেয় না। তবে মামলা হয়েছে কি না তা জানি না। যেহেতু তার বাবার অনেক বয়স হয়েছে সেক্ষেত্রে ভরণপোষণ দেওয়া উচিত বলে মনে করছি। তাফের আলীর আইনজীবী মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এর আগে ছেলের নামে আরেকটি মামলা ছিলো। এরপরও গত ১৮ আগস্ট তাফের আলী তার ছেলে আইনাল হোসেনের বিরুদ্ধে সন্তানরা ভাত না দেওয়া ও মারপিটসহ অন্যান্য অভিযোগে এ বছরের ২০ আগস্ট নওগাঁর আমলি আদালতে মামলা করেন।