উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এই সেতু
স্টাফ রিপোর্টারঃ শাহ মোহাম্মদ ইউনুস
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর স্বপ্নের ‘তিস্তা সেতু’। আগামী ২ আগস্ট (শনিবার) এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় এনে দেবে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
সেতুটি চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতে সময়, ব্যয় ও দুর্ভোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার। এটি এলজিইডি বাস্তবায়িত দেশের প্রথম দীর্ঘতম সেতু। সেতুতে বসানো হয়েছে ৩১টি স্প্যান এবং রঙ, লাইটিংসহ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হওয়ায় এটি এখন নয়নাভিরাম এক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পরিণত হয়েছে।
সেতুটি চালু হলে ঢাকা-কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার এবং যাত্রার সময় কমবে ৪ ঘণ্টারও বেশি। এতে কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারী, লালমনিরহাটসহ তিস্তা নদীর ওপারের অনেক জেলার সাথে গাইবান্ধা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, এই সেতুর কারণে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, পাল্টে যাবে নদীর দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। তিস্তা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন,
“এটি আমাদের কাছে শুধু একটি সেতু নয়, এটি আমাদের স্বপ্নের নাম। বহু বছর ধরে আমরা দুর্ভোগে ছিলাম—এখন সেটার অবসান ঘটছে।”
আরেকজন স্থানীয় জুলফিকার আলী জানান, “তিস্তা সেতু চালু হলে যোগাযোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমরা উপকৃত হবো। এখন আর কুড়িগ্রামবাসীকে ঢাকায় যেতে দীর্ঘপথ ঘুরে যেতে হবে না।”
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী জানান, সেতুর উভয় পাশে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার স্থায়ী নদীশাসন করা হয়েছে এবং ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতু নির্মাণের ফলক উন্মোচন করা হলেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। প্রায় ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।