সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য:
পিতামাতা হিসেবে সন্তানের প্রতি বহুমুখী কর্তব্য পালন করতে হয়। ধর্মীয় দিক থেকে ইসলামে পিতামাতার কর্তব্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে, মানবিক দিক থেকেও সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব রয়েছে।
ধর্মীয় দিক থেকে:
- শিশুকে ইসলাম শিক্ষা দেওয়া: সন্তান যাতে একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মুসলিম হিসেবে বেড়ে ওঠে, সেজন্য তাকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামের শিক্ষা দেওয়া পিতামাতার কর্তব্য।
- নামাজ শেখানো: ছেলেমেয়েদের যথাযথ বয়সে পৌঁছালে তাদের নামাজ শেখানো ও নিয়মিত নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করা পিতামাতার কর্তব্য।
- শরীরী ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান: সন্তানকে সকল প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পিতামাতার দায়িত্ব।
- ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান: সন্তানকে যথেষ্ট ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান করা পিতামাতার কর্তব্য।
- শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে সহায়তা: সন্তান যাতে ভালো শিক্ষা অর্জন করতে পারে সেজন্য তাকে সহায়তা করা পিতামাতার দায়িত্ব।
- জীবিকা নির্বাহে সহায়তা: সন্তান বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করা পিতামাতার কর্তব্য।
- বিবাহের ব্যবস্থা করা: ছেলেমেয়েদের যথাযথ বয়সে বিবাহের ব্যবস্থা করা পিতামাতার কর্তব্য।
মানবিক দিক থেকে:
- সুন্দর চরিত্র গঠন: সন্তান যাতে একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে সেজন্য তার চরিত্র গঠনে সহায়তা করা পিতামাতার কর্তব্য।
- ভালো আচরণ শেখানো: সন্তানকে ভালো আচরণ শেখানো ও সমাজের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে শেখানো পিতামাতার কর্তব্য।
- সঠিক নির্দেশনা প্রদান: সন্তান যাতে জীবনের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা পিতামাতার কর্তব্য।
- সময় দেওয়া: সন্তানের সাথে সময় কাটানো ও তাদের সাথে খেলাধুলা করা পিতামাতার কর্তব্য।
- মানসিক সহায়তা প্রদান: সন্তান যাতে মানসিকভাবে ভালো থাকে সেজন্য তাকে মানসিক সহায়তা প্রদান করা পিতামাতার কর্তব্য।
পিতামাতার কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সন্তান পরিবার ও সমাজে একজন মূল্যবান সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে।
সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য সম্পর্কে কুরআনের আয়াত:
কুরআনে সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য সম্পর্কে অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হল:
১. সন্তানকে ভালোবাসা ও যত্ন নেওয়া:
- সূরা বাকারা (২): ২১৮: "তোমরা কিভাবে ধর্ম পালন করবে? তোমরা কি তোমাদের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তোমাদের পিতামাতাকে অস্বীকার করবে? আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি যে, আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।"
২. সন্তানকে সঠিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা প্রদান:
- সূরা লুকমান (৩১): ১৩-১৯: "এবং তোমার পিতা যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন এবং তোমাকে বড় করেছেন তাদের প্রতি সদয় আচরণ করো। যদি তোমরা মনে করো যে, তারা ধর্মের ব্যাপারে জ্ঞানহীন এবং তোমাকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে তাদের সাথে বিতর্ক করো না। তাদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ করো এবং তাদের সাথে বিনয়ীভাবে কথা বলো। তাদের প্রতি দয়া করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো যে, আশা করি আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবেন।"
৩. সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব:
- সূরা তাহরিম (৬৬): ৬: "হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের সন্তানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হল মানুষ ও পাথর। অবিশ্বাসীরা সেই আগুনে পুড়বে।"
৪. সন্তানের ভালো চরিত্র গঠনে সহায়তা:
- সূরা আন-নিসা (৪): ১১: "তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দাও।"
৫. সন্তানের প্রতি ধৈর্য ও সহনশীলতা:
- সূরা আল-ইসরা (১৭): ২৩-২৪: "এবং তোমাদের পিতামাতাকে নম্রতার সাথে ডাকো। তাদের সাথে কথা বলার সময় কোমল স্বর ব্যবহার করো। এবং বলো, 'হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা আমাকে শিশুকালে লালন-পালন করেছে।'"
এছাড়াও, আরও অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।