সাভারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার সাজানো মামলায় অব্যাহতি পেলেন দুই সাংবাদিক
নাহিদ হাসান হৃদয়, সাভার
সাভারে কর্মরত দৈনিক তৃতীয় মাত্রার প্রতিবেদক সোহেল রানাকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামি ও জুলাই আন্দোলনের গণহত্যাকারী সামিউল আলম শামীম ওরফে এস এ শামীমের দায়ের করা পাল্টা সাজানো মামলায় সাংবাদিক সোহেল রানা ও সাংবাদিক জাহিন রিয়াজকে আদালত অব্যাহতি দিয়েছেন।
রবিবার (২ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম ইসরাত জাহান মুন্নি এই আদেশ দেন। সাংবাদিকদের পক্ষে শুনানি করেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল।
আইনজীবী আল মামুন রাসেল জানান, সাংবাদিক সোহেল রানা ও জাহিন রিয়াজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত তাদের অব্যাহতি দেন। আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল আলম শামীমের দায়ের করা সাজানো মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া
রায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাংবাদিক ও সচেতন মহল আনন্দ প্রকাশ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস দেখান। তারা মিষ্টি বিতরণ করে আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সচেতন মহল মনে করে, ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে আইনের অপব্যবহার সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার একটি কৌশল ছিল। আদালত এই মিথ্যা মামলায় দুই সাংবাদিককে খালাস দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে সাংবাদিকরা জনগণের বন্ধু।
সংঘাতের সূত্রপাত
২০২২ সালের ৯ আগস্ট আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় এক বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা ও পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শফিউল আলম সোহাগসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক সোহেল রানার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন শফিউল আলম সোহাগের ভাই সামিউল আলম শামীম।
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের ছবি বিকৃত করে হুমকি ও অপপ্রচার চালানো হয়। ১৩ আগস্ট সাংবাদিকরা প্রতিবাদস্বরূপ মানববন্ধন করেন এবং সেদিন রাতেই সোহেল রানা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
হত্যাচেষ্টার ঘটনা ও পাল্টা মামলা
১৪ আগস্ট দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের ভেতরে সোহেল রানাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট সাংবাদিকের মামা আশরাফুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে এস এ শামীম প্রধান আসামি ছিলেন।
কিন্তু ঘটনার পরদিনই ১৬ আগস্ট, হত্যাচেষ্টার ঘটনা আড়াল করতে এস এ শামীম পাল্টা মামলা দায়ের করেন সোহেল রানা ও জাহিন রিয়াজের বিরুদ্ধে। তদন্তে প্রমাণিত হয়, এই মামলা সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি
সোহেল রানার করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ আদালতে চলমান। অন্যদিকে, এস এ শামীম ও তার ১৯ অনুসারীর বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও, এস এ শামীম ও তার ভাই শফিউল আলম সোহাগের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে, যার কারণে তারা বর্তমানে পলাতক।