বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রীর ক্ষোভ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ধর্ষণের শিকার হওয়া এক ছাত্রী বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা’ শীর্ষক ছবি ও তথ্যচিত্রের আর্কাইভ প্রদর্শনীতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাষাঢ়া গোলচত্বর থেকে ছাত্রলীগের নেতারা তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ২০-২৫ জন ছিল এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে তোলারাম কলেজের পাশে তাদের একটি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তার ফোন কেড়ে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। একপর্যায়ে সবাই অফিস থেকে চলে যায়, শুধু দুজন থেকে যায় এবং তারা তাকে ধর্ষণ করে।
তিনি জানান, এই ঘটনা আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে শুরু করে প্রায় সবাই জানতেন। কিন্তু কেউই গুরুত্ব দেননি। অভিযুক্ত দুই ধর্ষক এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ তাদের কোনো শাস্তি হয়নি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সমন্বয়ক উমামা ফাতেমাকে বিষয়টি জানালে তিনি দুঃখপ্রকাশ করলেও পরে এ বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা নেননি। নুসরাত তাবাচ্ছুমকে জানালে তিনি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিতে বলেন। পরে মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।
সমন্বয়ক সারজিস শুরু থেকেই বিষয়টি জানতেন এবং প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
ধর্ষণের পর ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, গত ১০ নভেম্বর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন এবং ৩১ ডিসেম্বর তার গর্ভপাত হয়।
এ প্রসঙ্গে সমন্বয়ক নুসরাত তাবাচ্ছুম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ভুক্তভোগী ছাত্রীর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা, তদন্ত ও মামলা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি অন্য কিছু চেয়েছিলেন, যা অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সামাজিক আন্দোলনকর্মী মহিউদ্দিন রনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “ছয় মাস পর, জনতার জন্য ক্ষমতা নাকি ক্ষমতার জন্য জনতা? এখন এই প্রশ্নগুলো বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর কত প্রাণ দিতে হবে বিচার পাওয়ার জন্য?”
তিনি আরও লেখেন, “রাজনৈতিক দলগুলো ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিচারের দাবি না তুলে কী নিয়ে আলোচনা করে? তারা কি বলে না, জনতা শহীদ-গাজীদের জন্য বিচার চায়, এই বোনের ধর্ষকদের বিচার চায়?”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর ওপর এমন নির্মম অত্যাচারের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বিচার চেয়ে আন্দোলনের নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাননি। ফলে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।