বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুরে ইতিহাসখ্যাত মীরের বাগানের ‘মানত পূরণের’ মেলা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসজুড়েই চলে এ মেলা।
মনের ইচ্ছা পূরণে মাজারে তবারক দেয়ার প্রস্তুতিতে ভক্তদের ব্যস্ততা গোটা মেলাজুড়ে। শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কেউ অস্থায়ী উনুনে আগুন জ্বালছেন, কেউবা মানতের খিচুড়ি রাঁধছেন, আবার কেউ করছেন মাজার জিয়ারত। তাদের বিশ্বাস, এতে অসুখ-বিসুখ কিংবা যেকোনো ধরনের ‘বালা-মুসিবত’ দূর হবে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানত বা ইচ্ছা পূরণের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন ধর্মের শত শত ভক্ত নারী-পুরুষ এখানে এসে মাজার জিয়ারত করেন এবং খিচুড়ি রান্না করেন। রান্না করা খিচুড়ি মাজার কর্তৃপক্ষ এবং দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে নিজেরা খান এবং তবারক হিসেবে বাড়িতেও নিয়ে যান।
ভক্তরা বাড়ি থেকে চাল-ডাল, মুরগি, মাংস ও জ্বালানি কাঠসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসেন মাজারে। মাজারের সামনে চুলায় রান্না করা হয় খিচুড়ি।
ভক্তরা জানান, দুরারোগ্য অসুখ ও সন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা সংকট নিরসনে মানত পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তারা এখানে আসেন। মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলে বিশেষ খিচুড়ি রান্না। আবার অনেকে মানতের বাইরে পরিবার নিয়ে পিকনিক করতেও আসেন এ মেলায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, শত বছর থেকে মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় এখানে আসেন।
মেলায় আসা ভক্ত শ্রী রাধা রানী বলেন, ‘সব ধর্মের মানুষ এখানে আসেন। আমার সন্তান হচ্ছিল না, এখানে মানত করার পর হয়েছে, তাই তোবারক দিতে এসেছি।’
মাজারের মোতোয়ালি সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে প্রতি বছর বৈশাখ মাস জুড়ে এ মেলা চলে আসছে এবং কয়েকশ বছর আগে এ মাজার নির্মিত হয়েছে। এ মাজারে ঐতিহাসিক পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহর কবর রয়েছে।
এই মেলা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও এক অংশ।