
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুছিদং এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (AA)-র দমন ও নির্যাতনের ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ঘরহারা হয়েছে। স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, আরকান আর্মির সদস্যরা রাতের আঁধারে বাড়িঘর তল্লাশি ও লুটপাট চালিয়ে রোহিঙ্গাদের মালমাল ছিনিয়ে নেন এবং তাদের জোরপূর্বক মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে নৌকায় তুলে দেন।
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মংডু শহরের আশপাশের রোহিঙ্গারা “মগ বাগি” গ্রুপের দমন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেন। তবে বুছিদং অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থা জটিল হওয়ায় পালানো ঝুঁকিপূর্ণ; পাহাড় ঘেরা এলাকায় মধ্যভাগে ছোট রোহিঙ্গা গ্রাম, ফলে পালানোর পথ সংকুচিত।
২০২৫ সালের ৯ নভেম্বর, মালয়েশিয়ার উপকূলে রোহিঙ্গা অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে যায়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, নৌকায় প্রায় ৩০০ জন যাত্রী ছিল। ঘটনা ঘটে লংকাওয়ে দ্বীপের ঠিক উত্তরে, তারুতাও দ্বীপের কাছে।
মালয়েশিয়ার নৌ কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্ধার হওয়া জীবিতদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের পুরুষ, দুইজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এছাড়া, ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
পুলিশ প্রধান আদজলি আবু শাহ জানিয়েছেন, যাত্রীদের প্রথমে একটি বড় নৌকায় উঠানো হয়, সীমান্তের কাছে আসার সময় তিনটি ছোট নৌকায় স্থানান্তরিত করা হয়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী ছিল। একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে নৌকাডুবিতে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। এখনও বহু রোহিঙ্গার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সংস্থাগুলি উদ্ধার তৎপরতা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। তারা মানবিক সাহায্য ও নিরাপদ আশ্রয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে প্রায় ৫,৩০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় পা রেখেছেন। এর মধ্যে ৬০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ বা মৃত্যু ঘটেছে।
UNHCR ও IOM জানাচ্ছে, সীমিত সহায়তা, কর্মসংস্থানের অভাব, চলমান সংঘাত ও মানবিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার খোঁজে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথে যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরে এসব যাত্রার দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
সংস্থাগুলি মনে করিয়ে দিয়েছে, সমুদ্রে বিপদাপন্নদের জীবন রক্ষা মানবিক দায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনে বাধ্যবাধকতা। যতদিন মিয়ানমারের সংঘাত ও রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ সমাধান হবে না, ততদিন এই বিপজ্জনক যাত্রা বন্ধ করা কঠিন হবে।
দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছেন। সম্প্রতি আরকান আর্মির নির্যাতনের কারণে সাগর পথে নৌকা ডুবে মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এই মানবিক সংকট এড়ানো কঠিন।