
বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ আসাদুজ্জামান।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৫১ শতাংশ। এই তথ্যটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জরিপ এবং গবেষণা থেকে পাওয়া গেছে। এই বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ-এর 'বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫' বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫১% মেয়ের বিয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগেই হয়ে যায়।
মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ অনুযায়ী, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ১৫.৫ শতাংশ এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫১.৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের আইনি ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর। তবে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-এর ১৯ ধারা অনুযায়ী, 'বিশেষ প্রেক্ষাপটে' আদালতের নির্দেশ এবং মা-বাবার সম্মতিতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা সমালোচিত।
বাল্যবিবাহের কারণ
দরিদ্র পরিবারগুলো প্রায়শই আর্থিক বোঝা কমাতে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়।
যৌতুকের ভয়ে অভিভাবকরা অনেক সময় কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন।
কিছু এলাকায় পুরোনো সামাজিক প্রথা এবং সামাজিক চাপও বাল্যবিবাহের একটি কারণ।
শিক্ষার অভাবে অনেক পরিবার বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন নয়।
বাল্যবিবাহের প্রভাব
বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা নানা
কিশোরী মায়েরা রক্তাল্পতা, খিঁচুনিসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভোগেন। মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি থাকে।
বাল্যবিবাহের কারণে বেশিরভাগ মেয়েই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নষ্ট করে।
অল্প বয়সে বিয়ের ফলে মেয়েরা মানসিক অপরিপক্কতা এবং দাম্পত্য জীবনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।
প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা: ইউএনএফপিএ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। এটি নারী স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং আইন প্রয়োগ। কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।