আল জোবায়ের, স্টাফ রিপোর্টার।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) সম্প্রতি এক ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। গণিত বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিপু রায় (আইডি: ১৮০৮২০২) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কথোপকথনের সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে। বিষয়টি দ্রুতই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
রোববার (১৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিটি ঢাকা দিনাজপুর মহাসড়ক ও টিএসসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন—“বিশ্বনবীর অপমান সইবে নারে মুসলমান”, “বিচার চাই, দোষীর ফাঁসি চাই” ইত্যাদি। বক্তৃতায় তারা বলেন, মহানবী (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা কেবল ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা নয়, বরং জাতীয় সংহতির জন্যও হুমকি। শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করতে হবে এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।
দিপু রায়ের বিরুদ্ধে কেবল ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগই নয়; তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণারও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, তিনি এক মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাকে ধর্ম পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণও করেছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে এবং আদালতে মামলা করার পর ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ গত ১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
একপর্যায়ে ওই মেয়ের সঙ্গে কথোপকথনের সময়ই দিপু রায় মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন, যা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সমগ্র ক্যাম্পাস উত্তাল করে তোলে।
শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন," দিপু রায় আমাদের মুসলিম উম্মাহর প্রাণের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে কটুক্তি করে যে জঘন্যতম অপরাধ করেছে তার বিচার আমরা চাই। বিগত সময়েও বিভিন্ন জন মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি করেছে, কটুক্তি করার চেষ্টা করেছে। খতিয়ে দেখতে হবে তারা এই সাহস কোথায় পাচ্ছে। এই দিপু রায় একজন মুসলিম মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে ধর্ষণ করেছে এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কটুক্তি করেছে। আমরা এই কুলাঙ্গারের ফাঁসি চাই। শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হয়, তবে আন্দোলন কেবল হাবিপ্রবিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি তারা বলেন, “আমরা তখন আইন হাতে তুলতেও দ্বিধা করবো না।” মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল মুসলমানদের প্রিয় নেতা নন, তিনি মানবতার শিক্ষক। তাঁর সম্পর্কে কটূক্তি করা মানে কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করা। আমরা তা কখনো মানবো না। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিদ্যমান আইনে এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড হলেও এটি কোনোভাবেই যথাযথ নয়। তাদের ভাষ্য—“মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করা একটি দৃষ্টান্তমূলক অপরাধ, এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।” তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, আইন সংস্কার করে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তীতে তারা প্রক্টর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। হাবিপ্রবি প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামছুজ্জোহা বলেন, যতটুকু জেনেছি দিপু রায় ধর্ষণ মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার আছে। আমাদের শিক্ষার্ধীরা যে আন্দোলন করছে সে সম্পর্কে অবগত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নিতে হবে আমরা তা নিবো। সেইসাথে দেশের সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন যদি কোনো সহযোগিতা চায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতা করবো। তিনি একে অপরের ধর্মের প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল থাকার বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা চায় না কেউ কোনো ধর্মকে অসম্মান করুক হোক সেটি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান বা অন্য ধর্ম। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকতে হবে।