বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি দুই ধাপে ২ হাজার ১৭২ ওয়েম্যান নিয়োগ দিয়েছে, যা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর (১৯তম গ্রেড) এই পদগুলির প্রধান দায়িত্ব রেলপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। তবে নিয়োগ পাওয়া ওয়েম্যানদের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পাস হওয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উচ্চ শিক্ষিত তরুণরা পরিশ্রমনির্ভর এ পদে মানিয়ে নিতে পারছেন না। অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এছাড়া যারা এখনো কাজ করছেন, তারাও কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারছেন না। ফলে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৬৭ প্রার্থী এবং ২০২৪ সালের ৫ মার্চ ৪০৫ প্রার্থীকে চূড়ান্ত নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছিল।
ওয়েম্যানদের কাজ হলো লাইন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, লাইনের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করা, কাদা-মাটি জমলে পরিষ্কার করা ইত্যাদি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আগে এ পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এইট পাস, যা এখন এসএসসি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মাস্টার্স পাস করা প্রার্থীরাও আবেদন করছেন এবং চূড়ান্ত নিয়োগ পাচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে প্রচুরসংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন কিন্তু মানসম্মত কর্মসংস্থানের অভাবে তারা তুলনামূলক কম শিক্ষাগত যোগ্যতার চাকরিতে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'দেশে চাকরির ভয়াবহ অভাব রয়েছে। রেলের ওয়েম্যান পদে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি তারই প্রতিফলন।'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কমিটির কার্যবিবরণীতে বলা হয়, এসএসসি পাস প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও মাস্টার্স পাস প্রার্থীরা এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে আবেদন করেছেন। রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমও স্বীকার করেছেন যে অনেক মাস্টার্স পাস ওয়েম্যান চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এজন্য অপেক্ষমাণ তালিকা বড় করে রাখা হয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন জটিলতা না হয় সেজন্য চাকরি নীতিমালা পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা চলছে, তবে এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।’
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বাস্তব দক্ষতার মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে।