রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। রোজা শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা নয়, বরং তা আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মহান ইবাদত। রোজা পালনের জন্য সঠিক নিয়ত, সেহরি ও ইফতারের দোয়া জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে আমরা রোজার নিয়ত, সেহরি ও ইফতারের দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রোজা পালনের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত হলো মনের সংকল্প। রোজার নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়, মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট। তবে মুখে নিয়ত পড়লে তা নিয়তকে দৃঢ় করে।
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
“নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।”
মনে রাখবেন: নিয়ত রাতের বেলা বা সেহরির সময় করা যায়। তবে শেষ সময় হলো ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে।
সেহরি হলো রোজা রাখার জন্য ভোররাতে খাবার গ্রহণ। সেহরি খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রয়েছে। সেহরির সময় আল্লাহর রহমত ও বরকত কামনা করে দোয়া পড়া উত্তম।
وَبِصَوْمِ غَدٍ نَّوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمْضَانَ
উচ্চারণ: “ওয়া বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রমাদান।”
অর্থ: “আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করলাম।”
এছাড়াও, সেহরির পর নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়তে পারেন:
اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীমা রাযাকতানা ওয়াক্বিনা ‘আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যে রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
সেহরির গুরুত্ব: সেহরি খাওয়া রোজাদারের জন্য শক্তি যোগায় এবং রোজা পালনে সহায়ক হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ইফতার হলো সূর্যাস্তের পর রোজা ভঙ্গ করা। ইফতারের সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দোয়া পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দোয়াটি রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে পড়তেন।
ইফতারের দোয়া আরবিতে:
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।” (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
ইফতারের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া যায়:
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
বাংলা উচ্চারণ: “জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।”
অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া
রোজা শুধু শারীরিক নয়, আত্মিক ইবাদতও বটে। আমরা রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করি, নিজেদের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেস্টা করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যেই ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (পবিত্র বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজান মাসের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। এবং সব রোজা গুলা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নির্ধারিত দোয়া।