
নিউজ ডেক্স, আমার সকাল ২৪
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় প্রাইভেট ও কর্পোরেট সেক্টরের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এই খাতগুলো দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে এই অগ্রযাত্রাকে টেকসই ও জনকল্যাণমুখী করতে হলে প্রাইভেট ও কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।
সুশাসন বলতে বোঝায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা এবং অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। প্রাইভেট ও কর্পোরেট খাতে এর অর্থ হলো—মালিকানা, পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুস্পষ্ট দায়িত্ববণ্টন, নৈতিক ও পেশাদার কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা।
সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বিনিয়োগকারীর আস্থা বৃদ্ধি পায়, কর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা ও পেশাগত নিরাপত্তা তৈরি হয়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা শক্তিশালী হয়। এর বিপরীতে, সুশাসনের অভাবে কর্পোরেট অনিয়ম, আর্থিক কেলেঙ্কারি, শ্রম অসন্তোষ এবং প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়।
বাংলাদেশে কিছু প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স চর্চা করছে, তবে সামগ্রিকভাবে সুশাসনের চিত্র এখনও আশানুরূপ নয়। পরিবারকেন্দ্রিক মালিকানা কাঠামো, স্বজনপ্রীতি, অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ এবং স্বচ্ছতার অভাব এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে:
স্বচ্ছতার অভাব: প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্তে অস্বচ্ছতা দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি করে।
জবাবদিহিতার দুর্বলতা: ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে প্রায়ই জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না।
পেশাদার মানবসম্পদের সংকট: দক্ষ জনবল না থাকায় সামগ্রিক কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তার ঘাটতি: কর্মীদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় সামাজিক অস্থিরতা ও শিল্প বিরোধ জন্মায়।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়:
শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামো: পরিচালনা পর্ষদের কার্যকর ভূমিকা ও যোগ্য পরিচালক অন্তর্ভুক্ত করা।
জবাবদিহিতা ও তদারকি: অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, নিয়মিত অডিট এবং দায় নির্ধারণের সংস্কৃতি চালু করা।
যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ: পেশাদার মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।
শ্রম অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা: ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ও মানবিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকর আইন প্রণয়ন, কঠোর প্রয়োগ, নিয়মিত তদারকি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাইভেট ও কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন জোরদার করা সম্ভব। একই সঙ্গে ব্যবসাবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পরিবেশ তৈরি করাও সরকারের দায়িত্ব।
শেষমেষ, প্রাইভেট ও কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন কোনো বিলাসিতা নয়; এটি টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে একটি শক্তিশালী কর্পোরেট সংস্কৃতি, যা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।