কামাল হাছান, নলছিটি।
ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অবৈধ ডাইসু (সংযোজিত যান) বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে, যা প্রতিদিন দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে এবং আহত হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীরা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন অবাধে চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
বেপরোয়া গতির এই যানগুলো শহরের প্রধান সড়ক ও অলি-গলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে, যার ফলে পথচারীদের চলাফেরায় অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজট তৈরি হচ্ছে।
নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অনুমোদনহীন যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে তিন চাকার ডিজেলচালিত ডাইসু চলাচলের কারণে সড়কগুলো হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালকের বৈধ লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ নেই, ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। একদিকে চালকরা নিজেরাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে পথচারীদের জন্যও মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
ডাইসুগুলো মূলত ইট, বালু ও কাঠ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে অদক্ষ চালকদের কারণে এগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে নলছিটির সড়কগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ডাইসুর কারণে ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা যেমন:
২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মো. নয়ন হোসেন নামে এক হেলপার ডাইসু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুবেল হাওলাদার ডাইসু উল্টে চাপা পড়ে মারা যান।
২০২২ সালে শুকতারা ব্রিকস এলাকায় ইটবোঝাই ডাইসুর নিচে চাপা পড়ে ভাবনা নামে এক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে।
সুবিদপুর ও কুশঙ্গল ইউনিয়নের ইটভাটাগুলোতে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ডাইসু চলাচল করে। বিশেষ করে পূর্ব গোদন্ডা সড়কে এসব যানবাহনের আধিপত্য বেশি। ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
এছাড়া শব্দ ও বায়ুদূষণের কারণে স্থানীয়রা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ফজরের নামাজের পর থেকেই এসব যানবাহনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন পূর্ব গোদন্ডার বাসিন্দারা, এবং রাস্তায় উড়তে থাকা ইটের গুঁড়া ও ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
নলছিটির পৌর এলাকা, দপদপিয়া, মগড়, কুলকাঠি সহ একাধিক এলাকায় অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে খাদে উল্টে থাকা এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন, তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় মহলে প্রতিবাদ হলেও প্রশাসন নিঃশব্দে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, এসব অবৈধ যানবাহনের মালিকদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন, যার ফলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করতে সাহস পান না।
এছাড়া স্থানীয়রা দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, প্রশাসন অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করুক এবং অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিক। ঈদুল ফিতরের আগে ডাইসু দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সড়কটি মৃত্যুঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে।
স্থানীয় সচেতনমহলও বলেছেন, এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা দাবি করছেন, অনুমোদনহীন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ চালকদের প্রশিক্ষণ এবং সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। অন্যথায়, নলছিটি উপজেলার সড়কে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আঃ সালাম জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।