নিজস্ব প্রতিবেদক,সাজেদুল ইসলাম রাসেল, আমার সকাল ২৪
রাজনীতি কি এখন আর আদর্শ ও জনসেবার জায়গা, নাকি কেবল সুবিধাবাদীদের জন্য আশ্রয়স্থল? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের এক উপজেলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মহলে। কারণ, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এক ব্যক্তি—আলমগীর হোসেন।
এই নামটির সঙ্গে স্থানীয়দের পরিচয় দীর্ঘদিনের। কেউ বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতা; কেউ বলেন সমাজসেবক। কিন্তু অনেকের চোখে তিনি একজন চিহ্নিত ভূমিদস্যু, যিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ ও দখলদারি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুটি ছবিতে দেখা যায়—একটিতে তিনি জাতীয় পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতার গলায় মালা পরিয়ে দিচ্ছেন, আরেকটিতে তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত।
এই দুই দলের মধ্যে মতাদর্শগত ফারাক থাকলেও, আলমগীর হোসেনের উপস্থিতি দুই শিবিরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে নিয়মিত। এতে করে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—আসলেই কি তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, নাকি রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ হাসিল করছেন?
স্থানীয় একাধিক সূত্র ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীর হোসেন বহু বছর ধরে এলাকায় জমি দখলের কাজের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ থাকলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বারবার আইন ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,
“এমন অনেক জমি আছে, যেগুলোর প্রকৃত মালিক নিজের জায়গায় যেতে পারে না আলমগীরের ভয়ে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে বা প্রোগ্রামে থেকে সে নিজেকে ‘অন্তরঙ্গ’ হিসেবে উপস্থাপন করে, যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে সাহস না পায়।”
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ঘটনাগুলোই রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একজন ব্যক্তি দুই দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে একদিকে ক্ষমতার ছায়া নিচ্ছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছেন—এটা খুবই বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত।
এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান,
“রাজনীতির আদর্শিক ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ ধরনের সুবিধাবাদীদের কারণে। তারা শুধু নিজেদের জন্য রাজনীতিকে ব্যবহার করছে, কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা বা নৈতিকতা তাদের মধ্যে নেই।”
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে এখনই এসব বিষয়ে সজাগ ও দায়িত্বশীল হওয়া। শুধুমাত্র জনসমর্থন বাড়াতে বা লোক দেখানো আনুগত্যের ভিত্তিতে কাউকে দলে জায়গা দিলে, তা শেষ পর্যন্ত দলের ভাবমূর্তি ও আদর্শ উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
জনগণেরও প্রশ্ন:
রাজনীতি কি এখন শুধুই ক্ষমতার খেলা?
আদর্শ ও নৈতিকতা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে?
রাজনৈতিক নেতারা কি প্রকৃত কর্মী ও সুবিধাবাদীদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছেন?
আলমগীর হোসেনের মতো ব্যক্তিরা রাজনীতির ছায়ায় থেকে সমাজে ভয়, দখল ও অনিয়মের সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। তাই সময় এসেছে রাজনীতিকে শুধুমাত্র সংখ্যায় নয়, গুণগতভাবে পরিমাপ করার। রাজনৈতিক দলগুলোকে উচিত হবে—ব্যক্তি নয়, আদর্শ ও জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।