ডায়াবেটিস নিয়ে কমন প্রশ্নের উত্তর। যা আপনার জেনে রাখা ভালো।
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যেখানে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। শরীর খাদ্য থেকে শক্তির জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করে, এবং ইনসুলিন নামক হরমোন শরীরের কোষগুলিকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি হয় না, অথবা তাদের তৈরি ইনসুলিন কার্যকরভাবে কাজ করে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা নির্ভর করে কখন পরীক্ষা করা হচ্ছে তার উপর:
খালি পেটে (ফাস্টিং)FBS - Fasting Blood Sugar:
HbA1c পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি গত 2-3 মাসের গড় রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন, তবে মনে রাখবেন এগুলো ওষুধের বিকল্প নয়। আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার খাদ্যে ফাইবার, শাকসবজি, ফল এবং শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন। এই খাবারগুলি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
সম্পূর্ণ শস্য বেছে নিন। সাদা রুটি, ভাত এবং পাস্তার পরিবর্তে বাদামী রুটি, বাদামী ভাত এবং ওটমিলের মতো সম্পূর্ণ শস্য খান।
স্বাস্থ্যকর চর্বি খান। অলিভ অয়েল, বাদাম এবং এভোকাডোর মতো খাবারগুলিতে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। সোডা, জুস এবং স্পোর্টস ড্রিঙ্কগুলির পরিবর্তে পানি, চা বা কফি পান করুন।
নিয়মিত খাবার খান। এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।
আপনার খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন। অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে ছোট প্লেট ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের হন বা স্থূলকায়ী হন তবে এমনকি কিছুটা ওজন কমানোও আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
ধূমপান ত্যাগ করুন। ধূমপান আপনার ডায়াবেটিসের জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
পর্যাপ্ত ঘুমান। প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন। চাপ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, ধ্যান বা গভীর শ্বাসের ব্যায়ামের মতো চাপ কমানোর কৌশল অনুশীলন করুন।
বর্তমানে ডায়াবেটিসের চিরতরে নিরাময় সম্ভব নয়। তবে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যার ফলে রোগী স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
কিছু ক্ষেত্রে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদেরও নির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে ইনসুলিন ছাড়াই থাকা সম্ভব।
তবে, মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ এবং প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।
আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একজন যোগ্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা এবং তাঁর দেওয়া চিকিৎসা নির্দেশাবলী মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা ইনসুলিন উৎপাদনে সমস্যা হওয়া। এর ফলে শরীরের কোষগুলো শর্করাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজ (শর্করা) শোষণ করতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাব হলে শরীরের কোষগুলো গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে, শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করলেও কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না। একে ইনসুলিন প্রতিরোধ বলা হয়। এই অবস্থায় ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত শর্করা ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফাস্ট ফুড গ্রহণ করা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম না করলে বা শারীরিক কার্যকলাপ না করলে শরীরে শর্করার ব্যবহার কমে যায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
মানসিক চাপের কারণে শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। অর্থাৎ বংশগত কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।
কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড ও কিছু মানসিক রোগের ওষুধ, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি:
ডায়াবেটিসের বিপদ:
১. কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়:
২. জিন থেরাপি:
৩. স্টেম সেল থেরাপি:
৪. ইনসুলিন পাম্প:
৫. এসএলজিটি-২ ইনহিবিটার:
৬. সার্জারি:
ডায়াবেটিস চিকিৎসার আরও অনেক নতুন পদ্ধতি গবেষণাধীন রয়েছে।
মানবদেহে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা ৭০ থেকে ১৩০ mg/dL।
৪০ mg/dL অর্থাৎ ২.২২ mmol/L এর নিচে রক্তে শর্করার মাত্রা হলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কাঁপুনি, ঘাম হওয়া, দ্রুত হৃদস্পন্দন, বিভ্রান্তি এবং চেতনা হারানো। গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
৪০০ mg/dL অর্থাৎ ২২.২২ mmol/L. এর বেশি রক্তে শর্করার মাত্রা হলে তাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রচুর তৃষ্ণা, বারবার প্রস্রাব করা, অস্পষ্ট দৃষ্টি, ক্লান্তি এবং ওজন কমানো। দীর্ঘমেয়াদী হাইপারগ্লাইসেমিয়া ডায়াবেটিসের জটিলতা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং চোখের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা নির্ভর করে গর্ভাবস্থার পর্যায়ের উপর।
প্রথম ত্রৈমাসিক (০-১২ সপ্তাহ):
খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৯০ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।
খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা ১২০ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৭ সপ্তাহ):
খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৯০ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।
খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা ১২০ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৮-৪০ সপ্তাহ):
খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৯৫ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।
খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা ১৩০ mg/dL এর নিচে থাকা উচিত।