
আনহাজ হোসাইন হিমেল
বিশেষ প্রতিনিধি
ইসরায়েলি সেনাদের বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা সিটির সাবরা এলাকায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ভয়াবহ এ হামলার পর পুরো অঞ্চলে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোববার ভোরে একই পরিবারের বাড়িগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। স্থানীয়রা জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন। ইতিমধ্যে ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও আরও প্রায় ৫০ জন আটকা রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বজনদের অভিযোগ, উদ্ধারকাজ চালাতে গেলেই ইসরায়েলি ড্রোন থেকে গুলি চালানো হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হতাহতদের ছোট গাড়িতে করে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। এক মর্মস্পর্শী ভিডিওতে এক মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন—“আমার সব সন্তানকে হারালাম।”
একই দিনে গাজার পশ্চিম শাতি শরণার্থী শিবির, তাল আল-হাওয়া এবং মধ্য গাজার বুরেইজ শিবিরেও বোমা বর্ষণ চালানো হয়। এসব হামলায় আরও সাতজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজন শিশু। লক্ষ্যবস্তু ছিল জাতিসংঘের প্যালেস্টাইন শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) একটি ক্লিনিকের পাশের এলাকা।
ওয়াফা বার্তা সংস্থার বরাতে চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, শুধু রোববার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং দেড় লাখের বেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৪০ জন, যাদের মধ্যে ১৪৭ জন শিশু।
এদিকে গাজা সিটির বহু ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, রাস্তায় রিমোট-কন্ট্রোল বিস্ফোরক রোবট বসিয়ে রাখায় মানুষ ঘর থেকেও বের হতে ভয় পাচ্ছেন। ইসরায়েলি সেনাদের হিসাবে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
অন্যদিকে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও। তিনি বলেন, “সহিংসতা, জোরপূর্বক নির্বাসন ও প্রতিশোধের ওপর কোনও ভবিষ্যৎ দাঁড়াতে পারে না।” আন্তর্জাতিক মহলও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে, তবে তা সত্ত্বেও গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ থামছে না।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা