প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৬:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ৪:০৫ অপরাহ্ণ
সহজেই জেনে নিন কোর্ট ম্যারেজের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ!
কোর্ট ম্যারেজ এর নিয়ম, যে ভাবে আইন ও ধর্মীয় ভাবে বৈধ হয়, খরচ, বয়স, সুবিধা, অসুবিধা, সতর্কতা বিস্তারিত..
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনেক পন্থা আছে, আর তার মধ্যে অন্যতম হলো কোর্ট ম্যারেজ। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই, আইনিভাবে স্বীকৃত এই পদ্ধতিতে দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিবাহের মাধ্যমে একাত্ম হতে পারেন।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো কোর্ট ম্যারেজের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং খরচ সম্পর্কে।
কোর্ট ম্যারে*জ কী?
কোর্ট ম্যারেজ, যা বিবাহ নিবন্ধন আইন, ১৮৭২ অনুযায়ী আইনিভাবে স্বীকৃত একটি বিবাহ পদ্ধতি, যেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।
কোর্ট ম্যারেজের জন্য কোথায় যেতে হবে?
বাংলাদেশের যেকোনো জেলা সদরের জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে আপনি কোর্ট ম্যারেজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) / পাসপোর্ট (বর ও কনের)
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (বর ও কনের)
- বিবাহের জন্য সম্মতিপত্র (নোটারি পাবলিক কর্তৃক যাচাইকৃত)
- গার্জিয়ানের সম্মতি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- বিবাহ বিচ্ছেদ সনদ (যদি পূর্বে বিবাহিত হয়ে থাকেন)
- মৃত্যু সনদ (সাবেক স্বামী/স্ত্রীর, যদি প্রযোজ্য হয়)
- ধর্মীয় পরিচয়পত্র (ঐচ্ছিক)
আবেদন প্রক্রিয়া:
- উপরে তালিকাভুক্ত সকল কাগজপত্র সহ জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে যান।
- নির্ধারিত আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে তাতে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- আবেদন ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যুক্ত করুন।
- নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
- আবেদনপত্র জমা দিন এবং নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশাবলী গ্রহণ করুন।
খরচ:
- আবেদন ফি: ৩০০ টাকা
- নোটারি পাবলিকের ফি: প্রযোজ্য
- অন্যান্য খরচ (যেমন ছবি তোলা, ফটোকপি): প্রযোজ্য
বিবাহের নিবন্ধন:
- বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরে, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বিবাহ নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
- নিবন্ধন সনদের জন্য ৫০০ টাকা ফি প্রযোজ্য।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- বয়স: পুরুষের জন্য ২১ বছর এবং মহিলার জন্য ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে। ১৮ বছর পূর্ণ না হলে, গার্জিয়ানের সম্মতি প্রয়োজন।
- সাক্ষী: বিবাহের সময় দু'জন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। সাক্ষীদের বয়স ১৮ বছর এর বেশি হতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজ: আইনগত ও ধর্মীয় দিক, সুবিধা, অসুবিধা এবং সতর্কতা
কোর্ট ম্যারেজ হলো বাংলাদেশে আইনসিদ্ধভাবে বিবাহের একটি পদ্ধতি যেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আইনিভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
আইনগত দিক:
- বিবাহ নিবন্ধন আইন, ১৮৭২ অনুসারে কোর্ট ম্যারেজ বৈধ।
- জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করে এবং নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে কোর্ট ম্যারেজ করা যায়।
- বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরে, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বিবাহ নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়, যা আইনিভাবে বিবাহিত হওয়ার প্রমাণ।
ধর্মীয় দিক:
- কোর্ট ম্যারেজকে ইসলাম ধর্মে বৈধ বিবেচনা করা হয়।
- হিন্দু ধর্মে, কোর্ট ম্যারেজকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, তবে বিবাহের পর ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা যেতে পারে।
- অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে, কোর্ট ম্যারেজের বৈধতা ধর্মীয় নিয়মকানুনের উপর নির্ভর করে।
সুবিধা:
- ধর্মনিরপেক্ষ: ধর্ম নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তি কোর্ট ম্যারেজ করতে পারে।
- সহজ ও দ্রুত: ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার ঝামেলা ছাড়াই সহজে ও দ্রুত বিবাহ সম্পন্ন করা যায়।
- কম খরচ: ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তুলনায় কোর্ট ম্যারেজের খরচ অনেক কম।
- আইনি সুরক্ষা: কোর্ট ম্যারেজ আইনিভাবে স্বীকৃত, যা বিবাহিত দম্পতির আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
অসুবিধা:
- ধর্মীয় আপত্তি: কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কোর্ট ম্যারেজের প্রতি আপত্তি থাকতে পারে।
- সামাজিক চাপ: কিছু সমাজে কোর্ট ম্যারেজকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, যার ফলে বিবাহিত দম্পতিকে সামাজিক চাপের সম্মুখীন হতে হতে পারে।
- পরিবারের অসম্মতি: কিছু ক্ষেত্রে, পরিবারের অসম্মতির কারণে কোর্ট ম্যারেজ করা কঠিন হতে পারে।
সতর্কতা:
- কোর্ট ম্যারেজের জন্য আবেদন করার আগে সকল নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবধানে সংগ্রহ করে রাখুন।
- নোটারি পাবলিক এর কাছ থেকে বিবাহের জন্য সম্মতিপত্র যাচাই করিয়ে নিন।
- বিবাহের নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।
- বিবাহের পর স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
কোর্ট ম্যা*রে*জ প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?
ইসলামে কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে, বিভিন্ন আলেম ও ধর্মতত্ত্ববিদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান।
কিছু আলেম মনে করেন, কোর্ট ম্যারেজ শরীয়তের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, কোর্ট ম্যারেজে ইসলামী বিবাহের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ হয় না। যেমন, ওয়ালি (বিবাহের অভিভাবক) উপস্থিতি, মোহর নির্ধারণ, সাক্ষী উপস্থিতি ইত্যাদি।
অন্যদিকে, কিছু আলেম মনে করেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে কোর্ট ম্যারেজ মান্য হতে পারে। যেমন, যুদ্ধের সময়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, সামাজিক বা রাজনৈতিক সংকটের সময় ইত্যাদি।
তবে, সকল আলেমই একমত যে, ইসলামী বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোর্ট ম্যারেজ করার পূর্বে একজন মুসলিম ব্যক্তির উচিত:
- ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা।
- শরীয়তের নিয়মকানুন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
- পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা।
উল্লেখ্য যে, কোর্ট ম্যারেজ আইনিভাবে বৈধ এবং সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। তবে, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বৈধতা বিতর্কিত।
উপসংহার:
কোর্ট ম্যারেজ আইনিভাবে বৈধ ও সুবিধাজনক বিবাহ পদ্ধতি। তবে, ধর্মীয় আপত্তি, সামাজিক চাপ ও অনুষ্ঠানের অভাবের মত কিছু অসুবিধাও রয়েছে। বিবাহের পূর্বে সকল দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
আমার সকাল ২৪ পত্রিকার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন