![]()
প্রতিবেদক:
মেহেদী হাসান
স্থান: দক্ষিণখান, কসাইবাড়ি রেল গেট, ঢাকা
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (DEE) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। তবে এই মহাযজ্ঞের সুফল পেতে শুরু করার আগেই স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণখান থানার অধীন কসাইবাড়ি রেল গেট এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার স্থাপন করার জন্য মূল সড়কটি বন্ধ করে দেওয়ায় জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
ছবিতে দুর্ভোগের চিত্র
আপনার দেওয়া ছবিগুলোতে কসাইবাড়ি রেল গেট সংলগ্ন এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে:
১নং ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মূল রাস্তাটি একটি বিশাল নীল রঙের সাইনবোর্ড দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ডে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে: "রাস্তা বন্ধ"। নির্মাণ সামগ্রী ও বেড়ার কারণে পায়ে হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।
২নং ছবিতে দেখা যায়, সড়কের বড় একটি অংশজুড়ে নির্মাণ সামগ্রী, গাছের ডালপালা এবং মাটির স্তূপ। ক্রেন ও শ্রমিকরা কাজ করছেন। এর পাশ দিয়ে সরু রাস্তা ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
৩নং ছবিতে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণাধীন পিলার (Piers) কাঠামো দৃশ্যমান, যা প্রমাণ করে কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গাছপালা কাটার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে, যা পরিবেশগত প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
ভোগান্তির মূল কারণ
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার স্থাপনের জন্য রাস্তা বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হলেও, এর অব্যবস্থাপনা বা বিকল্প ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
যান চলাচলে অচলাবস্থা: রাস্তা বন্ধ থাকায় ওই এলাকার যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গণপরিবহনের রুট পরিবর্তন হওয়ায় যাত্রীদের দীর্ঘ পথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে।
জরুরী পরিষেবা ব্যাহত: রাস্তা বন্ধ থাকায় অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস বা অন্যান্য জরুরি পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিলম্ব ঘটছে।
ধুলো ও শব্দ দূষণ: নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকা ধুলোয় আচ্ছন্ন এবং দিনরাত চলছে মেশিনের তীব্র শব্দ। এই পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
ব্যবসায়িক ক্ষতি: দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা বন্ধ থাকায় স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে।
জনগণের দাবি
এলাকার ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষ থেকে নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিকল্প রাস্তার সুব্যবস্থা: মূল সড়ক বন্ধ করার আগে বা দ্রুত একটি কার্যকর বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কশাই বাড়ি থেকে হলিল্যাব এর রাস্তা ব্যবহার করা যাবে।
কাজের গতি বৃদ্ধি: নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কাজের গতি বাড়ানো।
নিয়মিত তদারকি: ধুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত জল ছিটানো এবং শব্দ দূষণ কমাতে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করার নিয়ম চালু করা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিঃসন্দেহে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দেবে। তবে, এই বৃহত্তর প্রকল্পের সুফল পেতে হলে নির্মাণকালীন সময়ে জনগণের সাময়িক দুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগী হতে হবে। একটি মেগা প্রকল্পের সফলতা শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণে নয়, বরং জনগণের ভোগান্তি কমানোর মধ্য দিয়েও পরিমাপ করা উচিত।