
ক্রাইম রিপোর্টার
নিউজ ডেক্স | আমার সকাল ২৪
কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাষণ্ড স্বামীর দা-এর এলোপাতাড়ি কোপে গুরুতর আহত হয়ে সাত দিনের কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নে। এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী নারী ফাতেমা খাতুন (২৫) একই উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। ছয় বছর আগে তার বিয়ে হয় অলোয়া ইউনিয়নের চান আমুলা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে।
বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ও মালামাল দেওয়া হলেও কিছুদিন ভালোভাবে সংসার চলার পর ফাতেমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বিয়ের দুই বছর পর তাদের ঘরে প্রথম কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এরপর থেকেই স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নানা অজুহাতে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিকবার মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করা হয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ফাতেমার বাবা আবারও টাকা দিলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
এরই মধ্যে ফাতেমা দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
গত মঙ্গলবার রাতের দিকে স্বামী শফিকুল ইসলাম, শাশুড়ি মোছা. রোকেয়া বেগম এবং শ্বশুর মো. আব্দুল হামিদ ফাতেমার ঘরে ঢুকে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে শ্বশুর ও শাশুড়ি তার হাত-পা চেপে ধরে রাখে এবং স্বামী শফিকুল ইসলাম দা এনে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
ফাতেমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
বর্তমানে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ফাতেমা। তার মাথা ও ঘাড়ে একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে। পাশে শুয়ে আছে তার সাত দিনের কন্যাসন্তান অহনা, যে নাড়াচাড়া করলেও বুঝতে পারে না মায়ের ওপর নেমে আসা ভয়াবহ নির্যাতনের ইতিহাস।
এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা।