
স্টাফ রিপোর্টারঃ মোঃ আবু সালেহ রিয়াজ | আমার সকাল ২৪.
বাংলাদেশ থেকে নেপাল হয়ে কানাডা, ইউরোপ বা অন্যান্য দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি মানব পাচার চক্র। প্রবাসে পাঠানোর নামে বাংলাদেশি তরুণদের নেপালে নিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এভাবে প্রতারিত তিন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সম্প্রতি সিলেটের এক ব্যক্তি তাদের কাছে খবর দেন- তার ভাইসহ তিনজনকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে নেপালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শর্ত ছিল, কানাডায় পৌঁছানোর পরই সব খরচ পরিশোধ করতে হবে। গত ১৩ অক্টোবর তিনজনকে নেপালে নেয়ার পর সেখানে একটি হোটেলে আটকে তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল কেড়ে নেয় চক্রটি। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কানাডার ভিসা ও টিকিটের ছবি পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে।
পরে চক্রটি জিম্মিদের পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে সেই ছবি তাদের পরিবারের কাছে পাঠায়। এরপর কানাডায় পৌঁছেছে দাবি করে একটি কানাডিয়ান হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলে। পরবর্তীতে প্রত্যেকের কাছ থেকে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবার কথা বলতে চাইলে জিম্মিদের অস্ত্রের মুখে বলতে বাধ্য করা হয়, আমরা কানাডায় পৌঁছে গিয়েছি। কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিন্তু একজনের পরিবারের সন্দেহ হলে তারা স্থানীয় দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের আত্মীয় কানাডায় ওই তরুণদের পরিচিতজনের কাছে পৌঁছে দিলে ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হবে। তখন পাচারকারীরা টালবাহানা শুরু করে এবং নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দ্রুত টাকা দিতে চাপ দেয়।
ব্র্যাক জানায়, পরিবারগুলো গত ২৬ অক্টোবর পুরো ঘটনা ও বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার অভিযানের আবেদন জানায়। এরপর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) এবং নেপালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রুজু হয়। সে দিন রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় এক দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের খবর নেপালের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছালে তারা ওই দিন রাত ৩টার দিকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের কাছে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেয়। ৩০ অক্টোবর তারা ঢাকায় ফেরেন, যেখানে ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাদের সহায়তা করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নেন।
ব্র্যাক জানায়, শুধু কানাডা নয় ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নেয়ার কথা বলে একইভাবে নেপালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। যেহেতু নেপালে যেতে ভিসা লাগে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়, তাই পাচারকারীরা নেপালকেই প্রথম ধাপ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বিশেষ করে কানাডায় পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ করা যাবে এমন প্রলোভনের ফাঁদে অনেকেই পড়ছেন।
নেপালের পুলিশ বিভিন্ন সময়ে এমন ঘটনায় একাধিক বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে, তবুও এসব প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তাই সাধারণ বিদেশগামীদের যেমন সচেতন হওয়া জরুরি, তেমনি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও জানাতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে বিপদে পড়া যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্র্যাক তাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে কাজ করবে।