কোভিড-১৯ মহামারীর আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭-৮ শতাংশের মতো। তবে মহামারীর পর থেকে সেই গতি ফিরে আসেনি। সরকার রাজস্ব ও আর্থিক উদ্দীপনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিলেও, ২০২০ সালের তুলনায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গত দুই অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি, রপ্তানিতে জটিলতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং অতিরিক্ত ঋণ নির্ভরতা অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলেছে।
২০২৩ সালের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে ১২ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে। এদিকে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫২ মিলিয়ন ডলারে।
ব্যাংকিং খাতের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২০০৮ সালের তুলনায় ৯.৫ গুণ বেড়ে ২০২৩ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। এই খাতে শৃঙ্খলার অভাব জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহেও প্রভাব ফেলছে।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানিতে ৫ শতাংশ ঘাটতি দেখা গেছে, যা অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার কৌশলের ফল। রপ্তানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেও (১১.৩৭ বিলিয়ন ডলার), প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে (আরএমজি) শ্রমিক অসন্তোষ ও সরবরাহ জটিলতা সমস্যা আরও ঘনীভূত করছে।
অর্থনৈতিক প্রকল্পে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ফলে ২০১৯ সালের জুনে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ায় এই ঋণ পরিশোধও কঠিন হয়ে পড়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে, আর্থিক সংকট মোকাবিলায় একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন ও টাস্ক ফোর্স গঠনসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখনও দৃশ্যমান ফলাফল আসেনি।
সরকারের টালবাহানার কারণে নির্বাচন-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন করছে। দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা না এলে এই সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে দ্রুততা এবং স্বচ্ছতা জরুরি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণই পারে দেশের ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলা করতে।