মোঃ শাকিল আহামাদ জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দুরুল হোদা’র বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ, নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন একই প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষক অবিভাবক ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৪ আগষ্ট) দুপুর ২ টার সময় মোহনপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ দুরুল হোদার নানা অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসার সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ।
লিখিত ঐ বক্তব্যে তিনি দাবী করেন, এই দুরুল হোদা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ। চাকরি করতেন একটি মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক হিসেবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই হয়ে গেছেন অধ্যক্ষ, করেছেন দুর্নীতি, গড়েছেন অবৈধ সম্পদ। পূর্বেই তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারনে কোনই ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ দুরুল হোদা’র বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছে তারাই হয়রানির শিকার হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি অভিভাবক সদস্য মুকলেসুর রহমান বর্তমান অধ্যক্ষ ও পূর্বের উপাধ্যক্ষ দুরুল হোদার অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি, এমপিওভুক্তি/এমপিও সংশোধন বন্ধ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করেছিলেন। তাতেও কোন কাজ হয়নি। দুরুল হুদা মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যার তথ্য প্রমান দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের।
এছাড়াও অধ্যক্ষ দুরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মোঃ শফিকুল ইসলাম পিতা হবির মোল্লা বলেন আমাকে পিয়ন পোস্টে চাকরি দিবে বলে আমার কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকা নিয়েছে। এই নিয়ে আমি রাজশাহী কোর্টে মামলা করেছি। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী মোঃ সাইফুল ইসলাম পিতা দারেস আলী অত্র মাদ্রাসায় সহকারি লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি করছিল। তার বেতন স্কেলে বাধা এবং মিথ্যা অপবাদ দেয় যে তিনি রাজাকার, জঙ্গির সাথে জড়িত বলে তার বেতন স্কেল বন্ধ করে দেয়। মোঃ সাইফুল ইসলামের একজন সহজ সরল মানুষ সে কোন জঙ্গি বা রাজাকারের সাথে জড়িত নয় । সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন মাদ্রাসার কমিটির সদস্য ওয়াজেদ আলী, মহাসিন এবং অধ্যক্ষ দূরুল হুদা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগপত্র দিয়ে আমার বেতন বন্ধ করে দেয়।
লিখিত বক্তব্যে সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ আরো বলেন, দুরুল হোদা নিজের দুর্নীতিকে ঢাঁকতে ২০১৭ সালের পর আওয়ামীলীগের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার জোরে উপাধ্যক্ষ দুরুল হুদা রাতের আধারে পছন্দের লোক নিয়ে গভর্নিং বডি তৈরী করে নিজের ইচ্ছেমত মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। উপাধ্যক্ষ পদে প্রায় ২৮ বছর চাকুরীর পর নিজের শিক্ষা সনদে তৃতীয় শ্রেনী থাকা সত্বেও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি, মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে অধ্যক্ষ দুরুল হুদা ৬ আগষ্ট হতে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ দুরুল হোদা’র পদত্যাগ দাবি করা হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন, অবিভাবক আ: মানিক, মোঃ হামিদ, মোঃ সাদ্দাম হোসেন, মোঃ রাজু,মোঃ মুরাদ মোল্লা, মোঃ মিনারুল,সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ সিরাজুল মোল্লা। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের মোঃ মামুনুর রশীদ, রাজশাহী কলেজ, মোঃ জুয়েল রানা, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট , মোঃ রাফি খান, মোঃ সৌরভ, মোহনপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এসকল অভিযোগের ব্যাপারে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ দুরুল হুদার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। আমার চাকরি প্রায় শেষের দিকে। আমি এতদিনে রাজশাহী শহরে একটি জমি কিনেছি। যা কিছু করেছি, নিয়মের মধ্যে করেছি। আপনি দয়া করে আমার অফিসে আসেন। আমি সব বিষয় খুলে বলবো। মাদ্রাসায় অনুপস্থিতির ব্যাপারে বললে তিনি বলেন, আমি ইউএনও স্যারের থেকে ছুটি নিয়েছিলাম।
পরে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, অধ্যক্ষ ছুটি নিয়েছেন কি না জানা নাই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।