
মাহমুদ হাসান রুবেল
উপজেলা প্রতিনিধি
আজ ২৬ নভেম্বর—শৈলকুপার ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও গৌরবের দিন কামান্না দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণে শহীদ হয়েছিলেন ২৮ জন মুক্তিকামী বীরসন্তান, যাদের মধ্যে ২৭ জন সেদিনই এবং গুলিবিদ্ধ আব্দুর রাজ্জাক রাজা (এফএফ) পরদিন শহীদ হন। এছাড়া শহীদ হয়েছিলেন একজন নারী—রঙ্গবিবি।
প্রতি বছরের মতো এবারও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। কামান্না হাইস্কুল মাঠসংলগ্ন কুমার নদের তীরে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ।
যুদ্ধকালীন কৌশলগত কারণে কামান্না ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাঁটি। ২৩ নভেম্বর রাতে ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সেখানে অবস্থান নেন। স্থানীয় রাজাকারদের সূত্রে হানাদাররা খবর পেয়ে ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে চারদিক থেকে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। সার্চলাইট ফেলে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করলে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সামান্য স্টেনগান ও মেশিনগান নিয়ে তাঁরা ভোর পর্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালালেও শেষ পর্যন্ত প্রাণ উৎসর্গ করতে হয় ২৭ জনকে।
এ যুদ্ধে শহীদ হন মাগুরার শিবরামপুরের সম্মিলিত মুক্তিবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার খোন্দকার আব্দুল মাজেদের ছেলে খোন্দকার রাশেদ আলী, তাঁর আত্মীয় সেলিম বিশ্বাস, শহীদুল্লাহ, পারনান্দুয়ালীর তাজুল ইসলামসহ আরও বীর যোদ্ধারা। একই যুদ্ধে গুরুতর আহত হন কমান্ডার আব্দুস সামাদ।
গ্রামবাসীর সাহসী ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। বৃদ্ধা ছামেনা বেগম সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে খড়ের স্তূপে লুকিয়ে রক্ষা করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাকে সহায়তার সময় পাকসেনাদের হাতে নিহত হন রঙ্গবিবি ও ফণিভূষণ কুণ্ডু।
পরদিন সকালে হাজারো মানুষ ছুটে এসে শহীদদের মরদেহ সংগ্রহ করেন এবং আশঙ্কার কারণে দ্রুত কুমার নদের তীরে পাঁচটি গণকবরে দাফন করেন।
স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর শহীদদের গণকবরের পাশে নির্মিত হয় শহীদ মিনার; পরে সরকারিভাবে স্মৃতিসৌধও নির্মিত হয়, যেখানে রঙ্গবিবির নামসহ সকল শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।