**চট্টগ্রাম:** সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। দেড় বছর আগে শুরু হওয়া এ গবেষণায় মুরগি ও ছাগলের ওপর প্রথম ধাপের পরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা জানান, রাসেলস ভাইপার সাধারণত নিরীহ ও অলস প্রকৃতির সাপ, যা বিপদ না দেখলে নিজ থেকে আক্রমণ করে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ চন্দ্রবোড়া, যা রাসেলস ভাইপার নামেও পরিচিত। দেশে এই সাপের বিষের শতভাগ কার্যকরী প্রতিষেধক নেই। বাংলাদেশের বিষধর সাপের বিষ ভারতীয় সাপের থেকে আলাদা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় সাপের প্রতিষেধক পুরোপুরি কার্যকর হয় না।
ভেনম রিসার্চ সেন্টারে রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ করছেন একদল গবেষক। এ গবেষণায় ইতোমধ্যে মুরগি ও ছাগলের ওপর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং এ বছরের শেষদিকে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরীক্ষা সফল হলে যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ বলেন, “রাসেলস ভাইপারের বিপরীতে আমরা একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করছি। মুরগি ও ছাগলের ওপর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হবে। আশা করছি, এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা আমাদের গবেষণা শেষ করতে পারব।”
সহকারী গবেষক আব্দুল আওয়াল বলেন, “আতঙ্ক তৈরি হয় মানুষের মনের ভয় থেকে। অন্ধকার ঘরে সাপ মানে সব জায়গায় সাপ। বাংলাদেশে এখন মনে হচ্ছে সাপ মানে শুধুই রাসেলস ভাইপার। এন্টিভেনমের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয়। বাংলাদেশের এন্টিভেনম, ভারতের এন্টিভেনম। আমাদের এখান থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতে এন্টিভেনম তৈরি হচ্ছে। যতই ভৌগোলিকভাবে আমরা দূরে যাচ্ছি, এন্টিভেনমের সক্ষমতা কমে যায়। যখন আমরা বাংলাদেশের সাপের ওপর বাংলাদেশের তৈরি এন্টিভেনম ব্যবহার করতে পারব, তখন এর কার্যক্ষমতা থাকবে শতভাগ।”
সহযোগী গবেষক মো. নোমান বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে রাসেলস ভাইপার নিয়ে কাজ করছি। রাসেলস ভাইপার অনেকটা নিরীহ ও অলস প্রকৃতির সাপ। যে জায়গায় থাকে সে জায়গার মধ্যেই থাকতে পছন্দ করে। নিজে তেড়ে এসে কামড় দেয়ার প্রবণতা কম। ঝুঁকি ও মানুষের সংস্পর্শের মাধ্যমে বিপদ মনে করলেই কামড় দেয়ার চেষ্টা করে শুধু।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের কারণে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক বেড়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।
গবেষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, একটি গুজব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, একই ছবি বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। যে অঞ্চলটিতে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি নেই, সেখানে যে নির্বিষ সাপ রয়েছে, সেটিকেও রাসেলস ভাইপার মনে করা হচ্ছে। সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৭টিতেই রাসেলস ভাইপার সাপের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে গবেষণার জন্য পঞ্চাশটি রাসেলস ভাইপার সাপ রয়েছে।