রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ক্রমেই বেড়েই চলেছে গণ-ছিনতাইয়ের ঘটনা। ধারালো সামুরাই-চাপাতি হাতে দিনে কিংবা রাতে অন্তত ২০টি স্থানে আক্রমণ চালাচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’-এর সদস্যরা। তারা কুপিয়ে জখম করে ছিনিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। এ অবস্থায় ছিনতাই রোধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের নিয়মিত যৌথ অভিযানের দাবি জানিয়েছেন মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীবাসী। ২০২৪ সালে ডিএমপির ৫০ থানায় ছিনতাইয়ের ৩৯৭টি মামলার মধ্যে মোহাম্মদপুরেই হয়েছে ৬৪টি। তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রকৃত ছিনতাইয়ের ঘটনা মামলা থেকে কয়েকগুণ বেশি।
মোহাম্মদপুরের শ্যামলী হাউজিং দ্বিতীয় প্রকল্পে সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি রাতে কিশোর গ্যাং হামলা চালায়। সামনে যাকেই পেয়েছে কুপিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মোহাম্মদ মামুন আছেন, যিনি ধারালো সামুরাইয়ের আঘাতে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আহত হন। এলাকাজুড়ে এখন চাপা আতঙ্ক, তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘আমার জন্মই এই এলাকায়। যারা ছিনতাই করছে, তাদের ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি। চলাচলে আমার নিজেরই ভয় লাগে। এরা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে পারে।’
শ্যামলী হাউজিং ছাড়াও শেখেরটেক, আদাবর, বেড়িবাঁধ, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা মডেল টাউন, চাঁদ উদ্যান, রায়েরবাজার, বসিলা গার্ডেন সিটি, তুরাগ নদীর ওয়াকওয়েসহ অন্তত ২০টি স্থানে নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ছিনতাইয়ের মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ছিনতাই রোধে ব্লক রেইড, চেকপোস্ট ও টহল বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যেসব ছিনতাইকারী জামিনে বেরিয়ে এসেছে, তারা যেন পুনরায় অপরাধে জড়িত না হতে পারে, সে জন্য আমরা সজাগ।’
র্যাব-২ এর অধিনায়ক খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের পর অপরাধীরা পাশের থানা কামরাঙ্গীরচর ও নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে পালিয়ে যায়। সেসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই রোধের চেষ্টা চলছে।’
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের প্রকৃত চিত্র বোঝা সম্ভব নয়। প্রকৃত ঘটনাগুলো মামলা থেকে কয়েকগুণ বেশি।’
স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ছিনতাই রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।