
মো: শাহীন হাওলাদার
ক্রাইম রিপোর্টার
ফরিদপুরের সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে এক নারী রোগীকে ক্লিনার দিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার নাঈম।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস জানান, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ামুলকে দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো, অপারেশন থিয়েটারের লাইফ সাপোর্ট–সংক্রান্ত ফ্রিজ বন্ধ থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকার্যকর ওষুধ মজুতসহ নানাবিধ গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এসব অপরাধের জন্য নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ফরিদপুরের কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকার গৃহবধূ ববিতা বেগম স্তনের সমস্যা নিয়ে সুরক্ষা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসক তাঁকে বায়োপসি পরীক্ষার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালের ওটি কর্মী নিয়ামুল ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেই বায়োপসি করার প্রস্তাব দেন।
পরবর্তীতে তিনি রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে নিজ হাতে অস্ত্রোপচার করে বায়োপসির জন্য টিস্যু সংগ্রহ করেন, সেলাই দিয়ে দেন এবং প্রেসক্রিপশনও লিখে দেন—যা সম্পূর্ণ বেআইনি, অননুমোদিত এবং রোগীর জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
অস্ত্রোপচারের প্রায় ১৫ দিন পর ববিতা বেগমের শরীরে ভয়াবহ সংক্রমণ দেখা দেয়। গত ৪ ডিসেম্বর তাঁকে ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাঁর সংক্রমিত স্তনের একটি বড় অংশ কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মাহামুদুল হাসান জানান, ডেপুটি সিভিল সার্জন বদরুদ্দোজা টিটোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুরে এই ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, লাইসেন্স, জনবল ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আরও কঠোর নজরদারির দাবি এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।