
মুনসুর হেলাল
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চলাচলের পথ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে গোলাম হোসেন (৬০) নামে এক দিনমজুরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের জাবাখালী গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত গোলাম হোসেন জাবাখালী গ্রামের মৃত হামিজ উদ্দিন মোড়লের ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িতে যাতায়াতের একটি চলাচলের পথ নিয়ে প্রতিবেশী বদর মোড়লের ছেলে রেজাউল মোড়ল এবং ইমান আলী মোড়লের ছেলে সাইফুল মোড়ল, সেলিম মোড়ল ও ফারুক মোড়লসহ কয়েকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে গোলাম হোসেনের বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে সর্বশেষ গোলাম হোসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে গত ১৮ ডিসেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে প্রতিপক্ষ হাজির না হওয়ায় পুনরায় শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি একই ঘটনায় তিনি সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। আদালতের নোটিশ জারি হওয়ায় প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে বিরোধপূর্ণ পথের কাছে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে গোলাম হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাকির হোসেন জানান, নিহতের বুক ও পেটে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত ছিল। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর উত্তেজিত স্থানীয় জনতা হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশকে খবর দিলে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিবের নেতৃত্বে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নয়জনকে আটক করে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করে।
শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ বিপ্লব হোসেন জানান, চলাচলের পথ ও জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতের ছেলে হাফিজুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবা শুধু নিজের বাড়িতে যাওয়ার পথ চাইছিল। সেই কারণেই তাকে জীবন দিতে হলো। আমি এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”