সাইফুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :
নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ট করা রোগী সাহেদ আলীকে অপারেশন করার অভিযোগ উঠেছে পল্লী চিকিৎসক সুমন কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে। তার অপারেশনের পর ক্ষতস্থানের মাংস পচে খুলে পরার পর সাহেদ আলীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯ টার সময় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত সাহেদ আলী নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বাগধানা (ঘোলাগাড়ী) গ্রামের মৃত কাফির উদ্দিনের ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিহত সাহেদ আলী তার কোমরে ফোঁড়া বের হওয়ার পর নওগাঁ জেলা সদর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার এক পর্যায়ে গত ২ অক্টোবর নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ট করা হয় সাহেদ আলীকে। রাজশাহী (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে তার পরিবারের লোকজন সাহেদ আলীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ ঘটনাটি তাদের পারিবারিক পল্লী (প্রাথমিক) চিকিৎসক সুমন কুমার মন্ডলকে জানালে সে রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া লাগবে না জানিয়ে রেফার্ট করার দিনই সাহেদ আলীর ফোঁড়া অপারেশন করেন। এরপর ৪দিন ধরে প্রতিদিন ড্রেসিং করে দেয়। এক পর্যায়ে অপারেশন করা স্থানের মাংস পচে খুলে পড়তে লাগলে রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে গত মঙ্গলবার রোগীকে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় সে মারা যায়।
এ বিষয়ে নিহত সাহেদ আলীর ছেলে ফরিদ বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার বাবা গেরস্তের বাড়িতে দিন মজুরী কাজ করতেন, আমিও পেটের দায়ে ঢাকা শহরে গিয়ে রিকশা চালায়। আমার বাবা ফোঁড়া জনিত কারনে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আমার বাবাকে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন। বাবাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পস্তুতিও চলছিল। সেই ফাঁকে আমাদের পরিবারের গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে বাবাকে তার চেম্বারে (সরস্বতীপুর কদমতলীর মোড়ে) নিলে গ্রাম্য ডাক্তার আমার পরিবারের লোকজনকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তিনি চিকিৎসার নামে আমার বাবাকে সেখানে অপারেশন করেন। গ্রাম্য ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারনে-ই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে মুঠোফেনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত গ্রাম্য চিকিৎসক সুমন কুমার মন্ডল চিকিৎসার কথা শিকার করে বলেন, আমি ত কোন সিজার বা বড়ো কোন অপারেশান করিনি। এসময় নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহীতে রেফার্ট করা রোগী সাহেদ আলীকে ফোঁড়া’র স্থানে অপারেশান করা হয়েছে, যা আপনি করেছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন এবং চিকিৎসার কাগজ-পত্র ও আমরা হাতে পেয়েছি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে অভিযুক্ত গ্রাম্য চিকিৎসক এক পর্যায়ে বলেন, আমার এই কাজটি (অপারেশান) করা ঠিক হয়নি এছাড়া
তাকে রেফার্ট করা হয়েছিল সেটিও জানতাম না।
নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, কোন গ্রাম্য চিকিৎসক-ই রেফার্ড করা কোন রোগীকে চিকিৎসাই করতে পারেন না। যদি এটা করা হয়ে থাকে নি:সন্ধেহে তিনি এটা অন্যায় করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসমত আলী বলেন, এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।