মোঃ শাকিল আহমেদ, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ এইচ এম শহিদুল ইসলাম এর পদত্যাগের দাবিতে মাদ্রাসাতে ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গভর্নর বডি সদস্যদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় । মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত মত বিনিময় চলতে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও তাদের নিয়োগ না দিয়ে মাওলানা শহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিধানমতে অধ্যক্ষের জন্য কামিল শ্রেণিতে অন্তত ১২ বছরের শিক্ষকতার অথবা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের এ মাদরাসায় যোগদানের আগে বাসুদেবপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় মাত্র ৫ বছর ৪ মাসের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছিল। এরআগে তিনি অন্য কোথাও যোগদান করেননি।
২০০২ সালের ২০ আগস্ট দারুস সালাম কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন শহিদুল ইসলাম। এরপর একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর বেতনভাতার জন্য তৎকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে অবেদন করেন। কিন্তু অধ্যক্ষের যোগ্যতা না থাকায় তারা তার বেতনভাতা প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
রাজশাহীর দারুস সালাম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এএইচএম শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে অবৈধ ঘোষণা করার পরও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। এমনকী ১০টি পদে নিয়োগ দিতে একটি বিজ্ঞপ্তিও ছেড়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুস সালাম কামিল মাদরাসা। ২০০০ সালে মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাসুম বিল্লাহ মারা যাওয়ার পর পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০২ সালের ৯ আগস্ট অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, যোগ্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা শিথিলযোগ্য।
অভিযোগ রয়েছে, যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও তাদের নিয়োগ না দিয়ে মাওলানা শহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিধানমতে অধ্যক্ষের জন্য কামিল শ্রেণিতে অন্তত ১২ বছরের শিক্ষকতার অথবা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের এ মাদরাসায় যোগদানের আগে বাসুদেবপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় মাত্র ৫ বছর ৪ মাসের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছিল। এরআগে তিনি অন্য কোথাও যোগদান করেননি।
২০০৩ সালে কামিলে তাফসির ও ফিকাহ বিভাগ খোলার জন্য মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন শহিদুল ইসলাম। পরে একই বছরের ১৩ জানুয়ারি মাদরাসার গভর্নিং বর্ডির রেজুলেশনে মুফাসসির/ প্রভাষক তাফসির পদে নিয়োগ দিতে বলা হয়। এরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাফসির বিভাগের প্রভাষক পদে আবেদন করেন মাওলানা শহিদুল। নিয়োগ বোর্ডে তিনি নিজেই অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন। এরপর তিনি ওই বিভাগের পদে যোগদান করেন। ৯ মার্চ তার নিয়োগ ও যোগদান অনুমোদন করা হয়।
নিয়োগ পাওয়ার পর বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করেন মাওলানা শহিদুল ইসলাম। সেখানে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সই করেন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রভাষক তাফসির পদে তার ৪৩০০ টাকা বেতন প্রদান করা হয়। বেতন পাওয়ার পর তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করেন। এরপর গভর্নিং বডি ভেঙে দেন। সেই কমিটির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অধিদপ্তরে অভিযোগ পাঠান।
অভিযোগ তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব গোলাম মোস্তুফা সই করা পত্রে তার অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির কারণে তার ইনডেক্স নম্বর বাতিল করা হয়। বাতিলের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিট খারিজ হওয়ার পর ২০১০ সালের ২ মার্চ তার ইনডেক্স নম্বর কর্তন করা হয়।
মাদরাসা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে তিনি মামলায় রায় পেয়ে আবারও রাজশাহীর দারুস সালাম কামিল মাদরাসায় যোগদান করেন। তার সবশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত পদটি ছিল কামিল মোফাসসির পদে। রায়েও তার অরিজিনাল পোস্টের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মাওলানা শহিদুল ইসলাম সেটি না করে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন এবং আবারও বেতন-ভাতার জন্য মাদরাসা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। কিন্তু তার বেতন-ভাতা প্রদান করেনি অধিদপ্তর। এমনকী তার ইনডেক্স নম্বর ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবশেষ এ ইনডেক্স নম্বর দিয়েই মাদরাসাটিতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন মাওলানা শহিদুল ইসলাম।
অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে এ অধ্যক্ষ পদে আছেন। নিয়ম অনুসারে প্রভাষক পদে ১২ বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে কিন্তু তার প্রভাষক পদে কোন অভিজ্ঞতা নেই অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে আছে। তার কোন বেতন হয় না তার কোন ইনডেক্স নাই। শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক না থাকার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য টিচারদের বেতন বাবদ মাদ্রাসা থেকে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা খরচ করে যা ব্যয়বহুল।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা গভর্নিং বডি সদস্য ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে তুলে ধরা হলে তারা বলেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুস সবুর।শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাকির হুসাইন উপাধ্যক্ষ, মুফাসসির জাকারিয়া হাবিবি, এস এম সালাউদ্দিন রতন, আব্দুস সবুর, আব্দুল ওহাব, আব্দুল করিম সহ অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা।
ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাফেজ সিহাব উদ্দিন, হাফেজ সুলাইমান, মোঃ সম্রাট, মোঃ শাকিল আহমেদ, মোঃ মাহবুব, মোঃ শাকিল পারভেজ, মাজেদুর রহমান সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এক দফা এক দাবি প্রিন্সিপালের পদত্যাগ।
শেষ পর্যায়ে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্যি বলে কয়েকজন শিক্ষক স্বীকারোক্তি করেন। এবং শেষে গভর্নিং বডির সভাপতি মোরশেদ মনজুর হাসান সাময়িকভাবে লিখিত আকারে বহিষ্কার করেন। এবং ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করবেন উপাধ্যক্ষ জাকির হুসাইন। পরবর্তীতে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বহিষ্কার করবেন বলে শিক্ষার্থীদের কে আশ্বাস দিয়েছেন।